অমিত শাহের দিল্লির পুলিশের বাধায় কার্যত ধাক্কা খেল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি চলো কর্মসূচি। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে দিল্লির রামলীলা ময়দানে আগামী দোসরা অক্টোবর ধরনা দেওয়ার কথা ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের। তৃণমূলের সেই ধরনার অনুমতি দিল না দিল্লি পুলিস। ফলে ফের সংঘাতের রাস্তাই তৈরি হল বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের।
গত ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। সেই টাকা ফেরত আনতেই দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
অভিষেকের এই কর্মসূচিকে সমর্থন করেছেন তৃণমূল নেত্রীও। কিন্তু দিল্লির পুলিসের এই সিদ্ধান্তের পিছনে বিজেপির কলকাঠি দেখছেন তৃণমূলের অনেক নেতাই। তৃণমূলের অভিযোগ, তৃণমূলের শক্তির কাছে আগে থেকেই ভয় পেয়ে গিয়েছে দিল্লি পুলিস।
বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরে (East Midnapore) প্রশাসনিক সভা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata)। সেই সভার ফাঁকে নবান্ন অভিযান নিয়ে বিজেপিকে (BJP) আক্রমণ করেন তিনি। মঙ্গলবার বিজেপির নবান্ন অভিযানের (Nabanna Abhijan) নামে মানুষের হেনস্থা করেছে। আমাদের একাধিক পুলিসকর্মী আহত। বিঘ্নিত হাটের ব্যবসা। এই অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'পুলিস চাইলে গুলি চালাতে পারত। কিন্তু সেটা কাম্য নয়। পুলিস যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত ভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু বাইরে থেকে লোক এনে গুণ্ডামি ঠিক নয়। রেলের জায়গা থেকে ইট ছুড়েছে, বোমা ছুড়েছে। লোক নেই বলে গুণ্ডামি করছে, আন্দোলনের নামে ব্যাগে বোমা-বন্দুক আনা যায় না। মাথা ফাটিয়ে দেব, এসব ঠিক নয়।'
তিনি জানান, গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করলে আমরা বাধা দিই না। কিন্তু অসামাজিক কাজ করলে পুলিস আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। এদিকে, নবান্ন অভিযানে আন্দোলনের নামে দাদাগিরি, গুণ্ডাগিরি হয়েছে। বিজেপি নেতাদের মদতে এসব হয়েছে। বুধবার এসএসকেএম-এ দাঁড়িয়ে এই দাবি করেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, 'শান্ত বাংলাকে অশান্ত করছে বিজেপি। পুলিস ধৈর্য এবং সংযমের পরিচয় দিয়েছে। ৩-৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাউকে রেয়াত করা হবে না। নবান্ন অভিযানে পেট্রোল এল কী করে? ইচ্ছাকৃত গণ্ডগোল করতে পেট্রোল আনা হয়েছিল। নিরস্ত্র পুলিসকে লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয়েছে। পুলিস চাইলে গুলি চালাতে পারতো। যেটা বাম আমলে হয়েছে, সিপিএম ভাবতো না, আমরা ভেবেছি এটাই পরিবর্তন। পরিকল্পিতভাবে পুলিসের উপর হামলা হয়েছে। অ্যাসিসটেন্ট কমিশনারের হাত ভেঙে দিয়েছে। উনার মাথায় হেলমেট ছিল বলে বেঁচে গিয়েছেন। বাংলায় ক্ষমতায় এলে কী করত বিজেপি? দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করত।'
তাঁর মন্তব্য, 'ভুল বুঝিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় বিজেপি। ত্রিপুরায় আমাদের উপর হামলা হয়েছে। সেখানে আমরা তো আইন হাতে তুলে নিইনি। সিপিএম-র হার্মাদরা এখন বিজেপিতে গিয়েছে। লাল ঝাণ্ডা ছেড়ে গেরুয়া ঝাণ্ডা ধরেছে। যারা সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম করেছে তাঁরাই এখন এসব করছে। আমার সামনে যদি এরকম হামলা হতো, তাহলে আমি মাথায় শ্যুট করতাম।'
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, নবান্ন অভিযানের সময় কর্তব্যরত থাকা অ্যাসিসটেন্ট কমিশনারের উপর হামলা চালিয়েছে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। তৃণমূলের অন্দর থেকেই এই অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। এদিকে, আহত এসি-র ডান হাতের হাড় ভেঙেছে। এসএসকেএম-এ চিকিৎসাধীন সেই পুলিসকর্তাকে এদিন দেখতে যান তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেই মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযান নিয়ে সরব হয়েছিলেন তিনি।