Share this link via
Or copy link
মনি ভট্টাচার্য: একজন অতিথি অধ্যাপক ও একজন সাফাইকর্মী, এই দুজনকে কোন পর্যায়ে গিয়ে তুলনা করা এ সমাজের পক্ষে সম্ভব বলতে পারেন? যদিও ছোট থেকেই শুনে এসেছি, কাজে কোনও লাজ নেই। কিন্তু অতিথি অধ্যাপক ও সাফাইকর্মী নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের নজির গড়েছেন বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাস তিনেক আগে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি সাফাইকর্মী নিয়োগ হবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। চলতি মাসে অতিথি অধ্যাপক নিয়োগ হবে বলে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। অভিযোগ, ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দুজনের মাসিক বেতন হিসাব করলে, একজন সাফাইকর্মী, একজন অতিথি অধ্যাপকের থেকে মাসিক ২০০ টাকা বেশি পাবেন। রাজ্যের পরিস্থিতি কতটা অবক্ষয় হলে, এমনটা দেখা যায়, এই উত্তর সাধারণ মানুষ দেবেন। এখানেই কি অভিযোগের শেষ? না, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অতিথি অধ্যাপক নিয়োগের ক্ষেত্রে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গাইডলাইনও মানছেন না ওই বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্রের খবর, গত ২৪শে মার্চ বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে একটি নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। যেখানে উল্লেখ ছিল, পদার্থবিদ্যা বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে অতিথি অধ্যাপক নিয়োগ করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়। সপ্তাহে সর্বাধিক চারটি ক্লাস করতে পারবেন চাকুরীপ্রার্থীরা। প্রতিটি ক্লাসের জন্য তাঁদের ৩০০ টাকা পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া হবে। এছাড়া সারা মাসে সর্বাধিক ১৬টি ক্লাস করতে পারবেন ওই অতিথি অধ্যাপকরা। ফলে দাঁড়ালো এই অধ্যাপকরা মাসে ৪৮০০ টাকা বেতন হিসেবেই পাবেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে।
সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অর্থাৎ ইউজিসি ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ সালে অতিথি অধ্যাপক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নিয়ম বেঁধে দেন। যেখানে বলা আছে, ওই অতিথি অধ্যাপককে প্রতি ক্লাসপিছু ১৫০০ টাকা দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কেই নজর রাখতে হবে যাতে ওই অধ্যাপক মাসিক কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা পায়। কিন্তু কমিশনের বিজ্ঞপ্তি আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষিত বেতনের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক অর্থাৎ এতটা বৈষম্য কেন? অতিথি অধ্যাপক নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের এই নিয়ম কেন মানা হচ্ছে না?
এ বিষয়ে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের দাবি, 'গোটা বিষয়টাই অভ্যন্তরীণ বিষয়।' যদিও এ বিষয়ে বিরাটি কলেজের সাংবাদিকতার অধ্যাপক দেবব্রত বিশ্বাসের মত, ' আমাদের অবশ্যই ইউজিসির নির্দেশ মেনে চলা উচিত, তবে সব কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় সমান ভাবে টাকা দেয় না, টাকার বিষয়টা নিতান্তই, যে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ করছে এবং যে আবেদনকারী তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার।'
বিতর্ক এখানেই শেষ নয়, শেষ নয় প্রশ্নও। সূত্রের খবর, সম্প্রতি ১৯শে ডিসেম্বর বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজেদের ওয়েবসাইটে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক সাফাইকর্মী পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। যেখানে একজন সাফাইকর্মীর মাসিক ভাতা ৫০০০ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়। প্রশ্ন উঠছে, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাফাইকর্মীর মাসিক বেতন কি করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন অতিথি অধ্যাপকের মাসিক বেতনের থেকে বেশি হয়?
এই বিষয়ে সিএন ডিজিটালের তরফে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সৌরভ দত্তকে ফোনে ধরা হলে, তিনি বলেন, 'এটা বিশ্ববিদ্যালয়েরর অভ্যন্তরীণ বিষয়, এখানে আমার কিছু বলার নেই।' এবিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সিএন ডিজিটালের তরফে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মাননীয় মন্ত্রীকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে প্রশ্ন উঠছে, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় কি তুঘলকি শাসন চালাচ্ছে? যেখানে মানা হচ্ছে না মঞ্জুরি কমিশনের আইন, যেখানে একজন সাফাইকর্মীর মাসিক বেতন, একজন অতিথি অধ্যাপকের মাসিক বেতনের থেকে বেশি?