Share this link via
Or copy link
প্রসূন গুপ্তঃ ৫ সেপ্টেম্বর ধূপগুড়ির উপ-নির্বাচন। এর আগের পর্বগুলোতে আমরা মোটামুটি বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেছিলাম। আজ আরও কিছু। ধূপগুড়িতে যতটুকু জানতে পারলাম, বিধানসভার মোট ভোটারের অনেকটাই রাজবংশীদের। এই রাজবংশী কারা? দেশ বিভাগের আগে উত্তরবঙ্গের 'এদেশীয়' বলতে যাদের মূলত বোঝায়, তারা রাজবংশী। স্বাধীনতার উত্তর এবং পূর্ব লগ্নে এই রাজবংশীরা উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা ছিল। পরে ঝাঁকে ঝাঁকে ওপার বাংলা থেকে উদ্বাস্তুরা এসে এদের সাথেই বসবাস করলেও ওই সময়ে কোথাও একটা গোষ্ঠীগত ফারাক ছিলই। শহর কলকাতা বা নিকটবর্তী অঞ্চলে যখন ওপার বাংলার মানুষরা এসেছিলো, তখন যেমন ঘটি বাঙালির একটা বিভেদ ছিল, যেমন ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের রেষারেষি ছিল, তেমন রাজবংশী ও উদ্বাস্তুদের মধ্যে একটা নরম লড়াই ছিল বা কিছুটা আজকেও আছে।
শোনা গিয়েছে, এ বিষয়ে বামপন্থীরা এই বিভেদের রচনা করেছিল। প্রাথমিক ভাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বা সংঘ পরিবার যেমন ওপার বাংলার উদ্বাস্তুদের পাশে দাঁড়িয়ে একটা রাজনীতির পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, পরে কিন্তু পঞ্চাশের মধ্যভাগে তা ছিনিয়ে নিয়ে পুরোপুরি রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছিল বামেরা। তারা উদ্বাস্তুদের যেমন বুঝিয়েছিল যে, বিধান রায় তাদের উপযুক্ত ত্রাণের বা ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করেননি, তেমন রাজবংশীদের বুঝিয়েছিল যে তাদের জমিতে উদ্বাস্তুরা দখলদারি করেছে। কাজেই এই পক্ষই বরাবরই কংগ্রেস বিরোধী ছিল এবং এই কারণে বারবার উত্তরবঙ্গে সফর করা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অঞ্চলগুলিতে খুব দৃঢ় সংগঠন করতে পারেননি। এই বিভেদের রাজনীতির কারণে রাজবংশী এবং উদ্বাস্তু, দুই গোষ্ঠীই বাম নির্ভর হয়ে পড়েছিল।
পরবর্তীতে ২০১৯ থেকে বামেদের সেন্টিমেন্ট কেড়ে নেয় বিজেপি এবং সেই কারণে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার তাদের দখলে। যদিও বিগত পঞ্চায়েতে তৃণমূল বেশ ভালো ফল করেছে উত্তরবঙ্গে, কিন্তু পঞ্চায়েত ও বিধানসভার মধ্যে ফারাক তো আছেই। এক সময়ে লালদুর্গ ধূপগুড়িতে বামদের ভোট আপাতত গেরুয়া বাক্সেই পড়ছে। মজার বিষয় ধূপগুড়ি বামদুর্গ হলেও বর্তমানের এই উপনির্বাচন নিয়ে তাদের খুব একটা তাপউত্তাপ নেই। একটা সময়ে যুব বামপন্থীরা প্রচারের অঙ্গ ছিল কিন্তু ইদানিং নব্য বামপন্থীরা যেন অনেকটাই কর্পোরেট ধারায় চলেছে। তারা মনে করে টেলিভিশন বা সোশ্যাল নেটে বিতর্কিত কথাবার্তা বললেই মানুষের ভক্তি তাদের উপর উপচে পড়বে। কিন্তু আদতে তাই কি হয়? ফ্যাশন দুরস্ত এই নব্য বামেদের কথা শুনতে ভালো লাগলেও তাদের কটাক্ষকে যে ভোটে পরিবর্তিত করা যায় না, তা বামেদের কে বোঝাবে! ( চলবে )