১৬ মে, ২০২৪

Toto: সংসার চালাতে টোটো চালানো শুরু করল বছর পনেরোর তরুণী, লড়াইকে কুর্নিশ সকলের
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-08-06 12:11:54   Share:   

সংসারের হাল ধরতে টোটো (Toto) চালিয়ে রোজগারের পথ বেছে নিল বছর পনেরোর গায়ত্রী হালদার। বর্তমানে গাইঘাটা (Gaighata) এলাকার সকলের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছে। সকাল হলেই টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে। মাঝে কিছুটা সময় স্কুলে পড়াশোনা, তারপর আবারও টোটো নিয়ে যাত্রীদের এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়ায় কাজ। আর এই যাত্রী পরিষেবা দিয়ে উপার্জন করা অর্থেই এখন চলছে গোটা সংসার। 

কারণ পরিবারের একমাত্র রোজগেড়ে বাবা অলক হালদার শারীরিক অসুস্থতার কারণে শয্যাশই হয়ে পড়ায়, সংসারের হাল ধরতে জেদ করেই টোটো চালানো শেখা গায়ত্রীর। ছোট্ট টালির চাল দেওয়া বাড়িতে অসুস্থ বাবা, মা ও দিদিকে নিয়ে সংসার গায়েত্রীর। শুধু সংসারের হাল ধরাই নয়, পাশাপাশি দিদির পুলিস হওয়ার ইচ্ছেকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে বোন হয়ে দিদির পাশে দাঁড়িয়েছে গায়ত্রী। ছোট মেয়ের সংসার চালানোর এই লড়াই দেখে, মা কৃষ্ণা হালদারও এলাকার দুটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ শুরু করেছেন। এলাকার মানুষও গায়েত্রীর এই লড়াইকে আজ কুর্নিশ জানাচ্ছেন। 

প্রথম অবস্থাতে নানা বিদ্রুপ কটুক্তির শিকার হতে হয়েছে গায়ত্রীকে। তবে তাঁর লড়াই-এর কাছে মাথা নত করতে হয়েছে সকলকে। এখন টোটো স্ট্যান্ডের সকলেই এমনকি পাড়া-প্রতিবেশীরাও সব রকমভাবে সাহায্য করেন বছর পনেরোর টোটো চালক গায়ত্রীকে। মাঝে কিছুদিনের জন্য টোটো খারাপ হয়ে যাওয়ায় টোটো স্ট্যান্ডে গায়ত্রীকে দেখা না যেতেই খোঁজ পরে তার। জানা যায় টোটোর ব্যাটারি খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণেই সমস্যায় পড়েছিল গায়ত্রী। পাড়া প্রতিবেশী ও টোটো চালকদের সাহায্যে আবারও নতুন ব্যাটারি লাগিয়ে পুনরায় যাত্রী পরিষেবা দিতে পথে নামে গায়ত্রী। মেয়ের এই লড়াই দেখে রীতিমত চোখে জল এনে দিচ্ছে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী বাবা অলক হালদারের। শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে মেয়েকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। বাবার চিকিৎসা খরচ থেকে শুরু করে দিদির পড়াশোনা এমনকি বাড়ির সকলের খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজের সমস্ত শখ আহ্লাদ ভুলে সকাল বিকেল টোটো চালিয়েই অর্থ উপার্জন করছে বছরে পনেরোর এই ছোট্ট মেয়েটিকে। 

স্থানীয় ঢাকুরিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও আজ গায়েত্রীর পাশে রয়েছে এবং সব রকমভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও স্কুলের বন্ধুবান্ধবদের ব্যবহার নিয়ে আক্ষেপের সুর গায়ত্রী গলায়। 

এত ছোট বয়সে গায়ত্রী আজ টোটো চালক। তাই হয়তো ক্লাসের অন্যান্য সহপাঠীরা সেভাবে কথা বলে না তার সঙ্গে। সেই কারণে স্কুলে আসলেও মানসিকভাবে একাই কাটাতে গায়ত্রীকে। সেই কথা বলতে গিয়ে রীতিমতো চোখের জল চলে আসলো নবম শ্রেণীর এই ছাত্রীর। গায়ত্রীর এখন চায় সরকারি সাহায্য করা হোক বা যেভাবে হোক বাবাকে সুস্থ করে তুলতে। এত অল্প বয়সে পরিবারের হাল ধরতে কজনই বা পারে! তাই টোটো চালক গায়ত্রী যেন আজ সমাজে লড়াইয়ের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। 


Follow us on :