১১ মে, ২০২৪

Barrackpur: চিকিত্সক প্রজ্ঞাদীপার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, গ্রেফতার লিভইন পার্টনার
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-06-24 13:01:38   Share:   

রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হল চিকিৎসক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের। পুলিস জানিয়েছে, ফ্লাট থেকেই তাঁর ঝুলন্ত দেহ (Death) উদ্ধার হয়েছে। দেহের পাশেই আবার পড়ে রয়েছে সুইসাইড নোট (Suicide Note)। সেই সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে- 'যে প্রহারের দাগ নিয়ে চলে গেলাম, এর শোধ কেউ নেবে। আমার মৃত্যুর জন্য কৌশিক দায়ী।' চলতি সপ্তাহের সোমবার চিকিৎসক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের দেহ উদ্ধার হয় ব্যারাকপুর সেনা ছাউনির অফিসার্স কোয়ার্টার্স ‘ম্যান্ডেলা হাউস'-এর ২০ নম্বর ফ্ল্যাটের একটি ঘর থেকে। ঘরের সিলিং ফ্যানে শাড়ির ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে দেহটি। প্রজ্ঞাদীপার মায়ের দাবি, তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না, তাঁকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়ের মৃত্যুর জন্য তিনি দায়ী করছেন মেয়ের লিভইন পার্টনার কৌশিক সর্বাধিকারীকেই। আর এই বিষয়েই মা ঝর্ণা দেবী ব্যারাকপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদিও সমস্ত বিষয়টির তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে মৃতের মা ঝর্ণা দেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত সেনা ডাক্তার তথা কৌশিক সর্বাধিকারীকে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে ব্যারাকপুর (Barrackpur) থানার পুলিস (Police)।

এই বিষয়ে মৃতের মা ঝর্ণা দেবী জানান, মেয়ের শরীরে এবং মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখা গিয়েছে। মেয়ে যেখানে থাকতো। সেই বাড়ি ব্রিটিশ আমলের বাড়ি। বাড়ির ছাদটি প্রায় ১১ ফুটের। সেখানেই সিলিং ফ্যানের সঙ্গে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়। 

মা ঝর্ণা হালদার আরও জানান, মেয়ে প্রজ্ঞাদীপা হালদারের প্রথম ২০১৩ সালে বিয়ে হয়। কিন্তু সেই বিয়ে বেশিদিন টেকে না, ফলে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মেয়ে প্রজ্ঞাদীপা পেশায় একজন চিকিৎসক। বারাসত ব্লক ১ নম্বরের অন্তর্গত ছোট জাগুলিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ করত। বিবাহ বিচ্ছেদের পরই ব্যারাকপুরে সেনা হাসপাতালে কর্মরত কৌশিক সর্বাধিকারীর সাথে সম্পর্ক হয় মেয়ের। কৌশিক বাবুর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর ২০২০ সাল থেকে ব্যারাকপুরে কৌশিকের সঙ্গেই থাকতো মেয়ে। তিনি আরও জানান, মেয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিলো রবিবার। সোমবার সারাদিন ফোন করলেও মেয়েকে ফোনে পাওয়া যায়নি। অবশেষে মাঝরাতে ফোন আসে মেয়ে সেনা হাসপাতালে রয়েছে। খবর পাওয়া মাত্রই পরিবার প্রতিবেশীদের নিয়ে ছুটে যায় ব্যারাকপুরে। ততক্ষণে সব শেষ। 

মৃতের মা ঝর্ণা হালদারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রজ্ঞাদীপার ওই লিভইন পার্টনারকে। বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে আটক করা হয় ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে। কৌশিকের বিরুদ্ধে মৃতের মা ঝর্ণা দেবীর অভিযোগ, তিনি প্রজ্ঞাদীপার উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন এবং তাঁকে আত্মহননে প্ররোচিত করেছিলেন। প্রজ্ঞাদীপা তাঁর সুইসাইড নোটেও কৌশিককে মৃত্যুর জন্য দায়ী করে গিয়েছেন বলে জানা যায়। 

পুলিস সূত্রে খবর, ময়না তদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ, প্রজ্ঞাদীপার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। যে ঘর থেকে ওই ঝুলন্ত দেহ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে অনেক জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। বিছানার পাশেই টেবিলের উপরে রাখা হুইস্কির বোতল, কাচের গ্লাসে সেটির পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ, লন্ডভন্ড বিছানা-বালিশ। এমন অনেক অসঙ্গতি তদন্তকারীদের মনে একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। 

ব্যারাকপুর পুলিস কমিশনারেটেরের ডেপুটি পুলিস কমিশনার সেন্ট্রাল আশিস মৌর্য জানান, গত ২০ তারিখ এই ঘটনা কেস রেজিস্ট্রার করা হয়। যেখানে আত্মহননের প্ররোচনার অভিযোগ রয়েছে। সুইসাইড নোটেও অভিযুক্ত কৌশিকের নাম উল্লেখ করা আছে। বৃহস্পতিবার অভিযোগের ভিত্তিতে কৌশিক সর্বাধিকারীকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার অভিযুক্তকে ব্যারাকপুর আদালতে ১০ দিনের পুলিসি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে পেশ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সুইসাইড নোটে যেহেতু উল্লেখ আছে কৌশিক সর্বাধিকারীর নাম, তাই পুলিসের প্রাথমিক তদন্তে তার এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অনুমান করা হচ্ছে। এরপর পুলিসি হেফাজতে নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে গোটা ঘটনার সঠিক তথ্য পাওয়া যেতে পারে, জানান বলে পুলিস কমিশনার।


Follow us on :