১৩ মে, ২০২৪

Abhishek: তবে কি নিয়োগ দুর্নীতিতে 'কাকুর ক্যালমা' সমন্ধে জানতেন অভিষেক!
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-07-30 18:51:23   Share:   

মণি ভট্টাচার্য: 'কাকুর ক্যালমা,' কে কাকু? সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। এই কাকু সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে ক্ষমতাশালী কাকু। যিনি তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভীষণ ঘনিষ্ঠ, সে কথা কাকু নিজেও স্বীকার করেছেন। সম্প্রতি তিনি রাজ্য শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু এরপরই হয়েছে  কেলেঙ্কারি, ইডির পেশ করা সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও কালীঘাটের কাকু অর্থাৎ সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কথা বলেছেন ইডি। পাশাপাশি চার্জশিটে একই অনুচ্ছেদে অভিষেক ও সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সম্পর্ক ও সুজয় কৃষ্ণের সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির যোগের কথা রীতিমত ভাবাচ্ছে সব রাজনৈতিক দলগুলিকে। এছাড়া চার্জশিটে ইডির দাবি নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার তছরূপের সঙ্গে জড়িত তিনি। এবং সেই সমস্ত টাকা সাদা করার জন্য বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগও করতেন তিনি।

সুজয় কৃষ্ণ অর্থাৎ কালীঘাটের কাকুর গ্রেফতারির ঠিক ৫৯ দিনের মাথায় ১২৬ পাতার একটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট আদালতে পেশ করেছে ইডি। সেখানে ৭৫ নম্বর পাতায়, কে এই সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র অর্থাৎ কালীঘাটের কাকু! এই পরিচয় ব্যক্ত করতে ইডির উল্লেখ, কালীঘাটের কাকু অর্থাৎ সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্ত আর্থিক বিষয়টি দেখভাল করেন। এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর সমস্ত নির্দেশ তিনি মানিক ভট্টাচার্য সহ নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত সমস্ত মিডল ম্যানকে পৌঁছে দিতেন। ঠিক তাঁর পরেই একই অনুচ্ছেদে ইডির উল্লেখ যে, ২০১২ ও ২০১৪ সালের টেট অনুত্তীর্ণদের পাস করিয়ে দেওয়া এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩২৫টি নামের তালিকা কালীঘাটের কাকুই মানিক ভট্টাচার্যকে দিয়েছিলেন। একই অনুচ্ছেদে এই দুটি বিষয়ের উল্লেখ থাকায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, যে তবে কি নিয়োগ-দূর্নীতি সম্বন্ধে কালীঘাটের কাকুর কেরামতি কিংবা ক্যালমা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানতেন! যদিও ইডির দেওয়া চার্জশিটে এমন কোনও উল্লেখ নেই, যেখানে স্পষ্ট হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাটের কাকুর কেরামতি অর্থাৎ নিয়োগ সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কথা জানতেন।

ইডি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নামার পর, ধাপে ধাপে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূল নেতা থেকে মন্ত্রীরা। একদিকে যখন মানিক ভট্টাচার্য, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়রা গ্রেফতার  হয়েছেন, ঠিক তেমনও গ্রেফতার হয়েছেন সৃজয় কৃষ্ণ ভদ্র ও কুন্তল ঘোষ ও তাপস মন্ডলরা। ইডি তার দেওয়া চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রই নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম কান্ডারী। এবং সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রই, কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য, এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি কে কত টাকা পাবে! কিভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া আয়োজন করা হবে! এবং কত টাকা কার থেকে নেওয়া হবে! সেই বিষয়েও দেখভাল করতেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। ইডির দেয়া চার্জশিটে উল্লেখ আছে ৩২৫ জন, ২০১২ ও ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়া এবং তাদের নিয়োগের জন্য মাথাপিছু এক লক্ষ টাকা করে নিয়েছিলেন কুন্তল ঘোষ এবং ওই টাকার একটি অংশ পৌঁছে গিয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্যের কাছেও, এবং সবটাই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের নির্দেশেই হয়েছিল বলে ইডির উল্লেখ।

ইডির দাবি তিনি রাজ্যের কোনও রাজনৈতিক চরিত্র নয়, এমনকি শিক্ষা দফতরেরও কোনও আধিকারিক কিংবা কেউ নন। তবে কিভাবে উনি এত ক্ষমতাবান হলেন! যেখানে বিভিন্ন পরীক্ষার্থীরা তার কাছে চাকরির জন্য সুপারিশ চাইতেন। এমনকি ইডির দাবি প্রাক্তন বোর্ড সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ঘরে তার প্রতিনিয়ত এবং বিনা বাধায় আসা যাওয়া ছিল।

এখানেই শেষ নয় ১২৬ পাতার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে ইডির উল্লেখ, এম এস ওয়েলথ উইজার্ড প্রাইভেট লিমিটেড ও লিপস এন্ড বাউন্স প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে, এই নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা বিভিন্নভাবে শেয়ার কিনে, বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করে, সাদা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তারও একটি খতিয়ান চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে। যদিও এই চার্জশিট তত্ত্ব উড়িয়ে তৃণমূলের দাবি, চার্জশিট মানেই অপরাধ প্রমাণ হওয়া নয়। এ বিষয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেন, 'ইডির চার্জশিট প্রমান করে না তারা অন্যায় করেছে। চার্জশিট প্রাথমিক পর্যায়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরে শুনানিতে গিয়ে এই ঘটনা মিথ্যা প্রমাণিত হতে পারে।'

যদিও কোনও ভাবেই হাল ছাড়ছে না ইডি, পাশাপাশি এই চার্জশিটের পর স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কোন ক্ষমতা বলে, কিংবা একটি অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়েও কোন ক্ষমতায় তিনি এই নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম পরিচালক ছিলেন? যদি কেবল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হবার জন্য এত ক্ষমতাবান তিনি হয়ে থাকেন, তবে কাকুর এহেন ক্যালমা কি সত্যিই অভিষেক জানতেন না! এ প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই।


Follow us on :