Share this link via
Or copy link
ধোপ দূরস্ত পোশাক, হাতে ব্যাগ আর গাদা-গুচ্ছেক কাগজ নিয়ে প্রায় বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি সরকারি এক আধিকারিকের গাড়ির দরজায় মুখ রেখে সমানে ঘেউ ঘেউ (Dog Bark) করে যাচ্ছেন! বাঁকুড়ার দু'নম্বর ব্লকের বিকনা গ্রাম পঞ্চায়েতের দুয়ারে সরকার (Duare Sarkar Camp) ক্যাম্পে এই দৃশ্য দেখে বিস্মিত অনেকেই। রীতিমতো ক্যামেরার সামনে সেই ব্যক্তির এই কাণ্ড দেখে প্রায় 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি' অবস্থা যুগ্ম বিডিওর (Joint BDO)। যেন কোনওভাবে ওই জায়গা ছাড়লেই হাঁফ ছাড়তে পারেন তিনি।
কিন্তু ঘটনাটা আদতে কী? জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া-২ নম্বর ব্লকের বিকনা গ্রাম পঞ্চায়েতের কেশিয়াকোল গ্রামের শ্রীকান্তি দত্ত রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দফতর থেকে যে আরকেএসওয়াই রেশন কার্ড পেয়েছেন, এটা প্রথম থেকেই ভুলে ভরা। প্রথমে তাঁর পদবি দত্তের জায়গায় হয়েছে মণ্ডল। তারপর ত্রুটি সংশোধনে শ্রীকান্তি হয়েছে শ্রীকান্ত। এবং সবশেষে সেই ত্রুটি সংশোধনে দত্ত পদবী হয়ে গিয়েছে 'কুত্তা'। আর এই ঘটনায় যথেষ্ট বিব্রত ও অসম্মানিত শ্রীকান্তি বাবু। তাই বুধবার বিকনা গ্রামে 'দুয়ারে সরকার' ক্যাম্প জয়েন্ট বিডিও পরিদর্শনে এলে কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে 'প্রতিবাদ' জানান শ্রীকান্তি দত্ত।
শ্রীকান্তি দত্ত জানান, 'রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলাম, প্রথম পর্যায়ে রেশন কার্ড হাতে পেলে দেখি আমি শ্রীকান্তি দত্ত হয়ে গিয়েছি শ্রীকান্ত মণ্ডল। সংশোধনের পর আমি হলাম শ্রীকান্ত কুমার দত্ত। ফের দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে গিয়ে সংশোধনের আবেদন করলাম। এরপর আর মানুষ নয়, হয়ে গেলাম কুকুর! শ্রীকান্তি দত্তের জায়গায় শ্রীকান্তি কুমার কুত্তা এলো আমার নাম।'
তাঁর মন্তব্য, এই ঘটনার পর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে গিয়ে জয়েন্ট বিডিও কে হাতের কাছে পেয়েও দত্ত কী করে কুত্তা হয় এই প্রশ্ন তাঁর কাছে রাখি। তিনি কোন উত্তর না দিয়ে এলাকা ছাড়তে চান। এই ঘটনায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ শ্রীকান্তি দত্তর মা হীরা দত্ত। তাঁদের 'সামাজিক সম্মানহানি' হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, 'গুরুত্বপূর্ণ কাজে চুক্তিভিত্তিক আর অশিক্ষিত কর্মী নিয়োগের ফলেই এই ঘটনা ঘটছে। আর যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আমার ছেলের আমি একটা নাম রেখেছি। দোকান করে ছেলে সংসার চালায়, আর এই ঘটনায় শতগুণ সম্মাণহানি হয়েছে।'
এদিকে, সিএন-এ এই খবর প্রচারিত হতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। নিজের পদবি ফিরে পান শ্রীকান্তি কুমার দত্ত। অবশেষে রাহুমুক্তি যুবকের। বাবা-মায়ের দেওয়া নাম-সহ রেশন কার্ড হাতে পান তিনি।