১০ মে, ২০২৪

DSP:'ব্যাকআপ দিতে আসবেন', মালদহের স্কুলে বন্দুকবাজকে নিরস্ত্র করার গল্প শোনালেন ডিএসপি
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-04-26 19:54:51   Share:   

বুধবার খবরের শিরোনামে উঠে আসে মালদহের প্রত্যন্ত এলাকার মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুল। এদিন দুপুরে হাতে বন্দুক এবং বোতল বোমা নিয়ে এই স্কুলে হামলা চালান দেব বল্লভ নামে এক ব্যক্তি। সশস্ত্র অবস্থায় ঢুকে পড়ে ভরা ক্লাসরুমে। পড়ুয়াদের পণবন্দি করে শাসাতে থাকে দেব বল্লভ। একাধিক সংবাদ মাধ্যমে চলা এই রোমহর্ষক ভিডিওয় দেখা গিয়েছে খুদে পড়ুয়াদের আতঙ্কিত মুখ। হাড়হিম করা এই ঘটনায় 'সুপারম্যান' হিসেবে দেখা গিয়েছে মালদহের ডিএসপি আজহারউদ্দিন খানকে। তিনি উদ্যোগী হয়ে ছুটে এসে নিরস্ত্র করেন অভিযুক্ত বন্দুকবাজকে। 'সুপারহিরো'দের মতো এহেন কাজ করে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী নয় এই ডিএসপি। তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সিএন ডিজিটালের প্রতিনিধি মুন্নী চৌধুরী। একান্ত সাক্ষাৎকারে ঠিক কী বললেন আজহারউদ্দিন খান।

'আমি আমার কর্তব্য করেছি। আল্লাহর রহমত ছিল, বাবা-মায়ের দোয়া ছিল বলেই এই ঝুঁকিটা নিতে পেরেছি।' জীবনবাজি রেখে আজকের গল্পের 'হিরো' মালদহের ডিএসপি (ডিএনটি) আজহারউদ্দিন খান। কীভাবে এই ঘটনার কথা জানতে পারলেন তিনি?

উত্তরে ডিএসপি আজহারউদ্দিন বলেন, ' প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এসপি স্যার এবং ডিজি স্যরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। এসপি স্যার আমাকে জানিয়েছেন মালদহের স্কুলের এই ঘটনার কথা। আমাকে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। আমি আইসিকে ফোন করে ঘটনাটি বিস্তারিত জানি। আইসি বলেন, একজন লোক পুরনো মালদহের অন্তর্গত মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুলে ঢুকে ৭০ জনের মতো পড়ুয়াকে বন্দি করে রেখেছে। তার সঙ্গে বন্দুক এবং বোমা রয়েছে। আমার এসপি অফিস থেকে ওই স্কুলের দূরত্ব ১০ মিনিট। সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়ি। স্কুলে পৌঁছে জানতে পারি, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিটি পুলিস ইউনিফর্ম পরা কাউকে দেখলেই রেগে যাচ্ছে। এমনকি ইউনিফর্ম পরা কেউ সামনে গেলে গুলি চালিয়ে দেবে বলেও হুমকি দিচ্ছিল। সেকারণে ঘটনাস্থলে যাঁরা (পুলিস) ছিলেন তাঁরা বাইরে অপেক্ষা করছিলেন।'

কীভাবে বাগে আনলেন বন্দুকধারীকে? জবাবে তিনি বলেন, 'এরপর আমি একটা প্ল্যান করি। স্কুলের পিছনের পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকি। যেহেতু ইউনিফর্ম দেখলেই রেগে যাচ্ছে, তাই আমি আগে এসআই দিলীপ হালদারকে বলি আপনি আগে ভিতরে চলে যান। তারপর আমি ওখানকার একটা স্থানীয় ছেলের থেকে টি-শার্ট নিই। ইউনিফর্ম খুলে সেই টি-শার্ট পরে নিই। আমার জুতোটা খুলে লোকাল একজনের থেকে চপ্পল পরি। বেল্টটাও খুলি। আগেই দেখেছিলাম, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ভয় পাচ্ছেন না বন্দুকবাজ। ছবি তুলতে দিচ্ছেন, কথাও বলছেন। আমিও সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে মিশে যাই। ক্যামেরা চালু করে পৌঁছে যাই। তখন সে স্কুলের ওই রুমে দরজার সামনে বন্দুক উঁচিয়ে সাংবাদিকদের ইন্টারভিউ দিচ্ছিল। আমাকে দেখে ভাবে আমিও ক্যামেরাম্যান।'

 এই অভিযান প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'তারপর যখন ওই ব্যক্তি কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, আমি তখন একটু সরে যাই। এসআই দিলীপ বাবুকে পাঁচিলের ওখানে গিয়ে বলি, আপনি একটু একটু করে সরে আসবেন। গেটের ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন। আমি যখনই ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ব, তখনই আপনারা ব্যাকআপ দেওয়ার জন্য চলে আসবেন। সেই পরিকল্পনা মতো আমি ঝাঁপিয়ে পড়ি। অস্ত্রহীন করি ওই বন্দুকবাজকে। তখনই বাকিরা চলে আসেন। সবটা কন্ট্রোলের মধ্যে নেওয়া হয় এবং গ্রেফতার করা হয়। বাচ্চারা সবাই নিরাপদে বেরিয়ে যায়। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।'

জীবনবাজি রেখে এমন সাহসিকতার জন্য সকলেই প্রশংসা করছেন। এত বড় ঝুঁকি নিতে গিয়ে একবার ভয় লাগেনি? তখন আজহারউদ্দিন বলছেন, ‘‘আমি আমার কর্তব্য করেছি।’’


Follow us on :