১০ মে, ২০২৪

Kapalkundala: কাব্যময়তার রহস্যে কপালকুন্ডলা ও লেখক (প্রথম পর্ব)
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2022-11-01 19:27:47   Share:   

সৌমেন সুর: নৌকা চলছে নদীবক্ষ দিয়ে। নৌকা চলছে তো চলছেই। অনেকক্ষণ চলার পর নাবিকরা বুঝতে পারেন দিকভ্রম হয়েছে। নৌকায় উপস্থিত যাত্রীরা ভয়ে অস্থির হয়ে পড়ে। অবশেষে তীরের সন্ধান মেলে। নৌকা ভেড়ে তীরে। অধিকাংশ যাত্রীই খিদেয় কাতর। নৌকায় যা রসদ আচে, সেগুলো উদরস্থ করতে রান্নার প্রয়োজন। রান্না করতে হলে কাঠের প্রয়োজন। এখন এই ঘন বনে কে কাঠ আনবে? কেউ রাজি না হওয়াতে যাত্রী নবকুমার রাজি হয়। চলে যায় গভীর বনে।

সাহিত্য সম্রাট ঠিক এই সময় নবকুমারের চোখে বনমধ্যে এক অপূর্ব নারীমূর্তি দর্শন করালেন। নবকুমার অবাক দৃষ্টিতে দেখলেন খোলা, লম্বা চুল কালো মেঘের ন্যায়, অতি স্থির, স্নিগ্ধ, গম্ভীর অথচ এই নারী যেন জ্যোতির্ময়। রমনী বুঝতে পারলেন, পথিক পথ হারিয়েছে। পথিককে আশ্বস্ত করলেন এক কাপালিকের আশ্রমে নিয়ে এসে। নবকুমার আশ্রয় পেয়ে স্বস্তি পেলেন। কাপালিক এদিকে মনঃস্থির করে ফেলেছেন নবকুমারকে বলি দেবেন।

অর্থাৎ নরবলি। কাপালিক নবকুমারকে বেঁধে রাখলেন। নবকুমার স্থির বুঝতে পারলেন, কাপালিকের কাছে সে বন্দি। তাঁর প্রাণ উৎসর্গ হবে মায়ের চরণে। কিছু সময় পর নবকুমার চমকে ওঠে। এ যে সেই মনমোহিনী কপালকুন্ডলা। তাঁর হাতে একটা খড়গ, রমনী খড়গ দিয়ে নবকুমারের বাঁধন ছিন্ন করে। নবকুমার মুক্ত হলে রমনী তাঁকে পালিয়ে যেতে বলে। এখানে বঙ্কিমচন্দ্র মায়া-মমতা ঘেরা নারী চরিত্র ফুটিয়ে তুললেন কপাল কুন্ডলার মাধ্যমে। 

কপালকুন্ডলা নবকুমারকে অধিকারী ঘরে রেখে কাপালিকের কাছে চলে যেতে চায়। অধিকারী মানা করেন, সেখানে গেলে কাপালিকের দংশনে মৃত্যু হতে পারে। একমাত্র বিবাহ, কপালকুন্ডলাকে ধর্মপত্নী যদি নবকুমার করে তাহলেই একপ্রকার মুশকিল আসান। অতএব অধিকারীর নির্দেশে ওদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। কপালকুন্ডলা তাঁর বন, জঙ্গল ফেলে চললো নবকুমারের সঙ্গে। এবার নবকুমার মেদিনীপুরে কপালকুন্ডলার জন্য এক রক্ষক দাসী নিযুক্ত করলেন, সেটা অধিকারীর ধন বলে। রাতের শেষ প্রহরে কিছু একটা ভেঙে পড়ার শব্দ হয়, নবকুমার ছুটে এসে যা দেখে তাতে স্তম্ভিত হয়ে যায়। অপূর্ব সুন্দর এক নারী নাম মতি বিবি। সাহিত্য সম্রাতের লেখনি যেন ইতিহাসের প্রেমস্পর্শের প্রতিচ্ছবি, কপালকুন্ডলা তার ব্যতিক্রম নয়। তিনি উপন্যাসে নিয়ে আসেন সেলিম, মেহের উন্নিসার মতো চরিত্র। তাঁর চরিত্র চয়ন যেন প্রেমস্পর্শের ইতিহাসের সাক্ষী। (বাকি অংশ আগামি পর্বে)       


Follow us on :