Share this link via
Or copy link
সৌমেন সুর: সেই সময়ের কথা। তখন সদ্য প্রকাশ হয়েছে রবীন্দ্রনাথের 'ঘরে বাইরে' উপন্যাস। অমিয় চক্রবর্তী (Amiya Chakraborty) তখন হেয়ার স্কুলের ছাত্র। বইটি পড়ে তরুণ অমিয় চক্রবর্তী মনে অনেক প্রশ্ন জাগে, রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখলেন। রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath) চিঠি পেয়ে পত্র লেখক কে প্রবীণ মনে করে 'আপনি' সম্বোধন করে চিঠির উত্তর দেন। পরিচয়ের সূত্রপাত হলো এই প্রথম। তারপর অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে কবির সশরীরে দেখা বালিগঞ্জের মে-ফেয়ার রোডে প্রমথ চৌধুরীর বাড়িতে। তখন কবিকে দেখে আপ্লুত অমিয়। তাঁর প্রভাব অমিয় চক্রবর্তী জীবনকে বদলে দিল। আস্তে আস্তে পরস্পরের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। একসময় অমিয়'র শোকের যন্ত্রণা থেকে কিভাবে শান্ত থাকতে হয় সে ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ তাকে উদ্ধার করেছিলেন। এরপর রবীন্দ্রনাথই তাকে কাছে টেনে নিলেন-করলেন তার সাহিত্য সহকারী।
অমিয়চন্দ্রের কাজ হল রবীন্দ্রনাথের বিদেশী চিঠিপত্রের উত্তর দেওয়া, বইয়ের প্রুফ দেখা, কবিতা কপি করা, অতিথিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, বাংলা ও ইংরেজি পান্ডুলিপি প্রকাশের জন্য সাজিয়ে রাখা, ইন্টারভিউ দেওয়া ইত্যাদি। প্রত্যেকটি কাজে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাই বিদেশীদের অভ্যর্থনার ভার তার ওপর ছেড়ে দিয়ে কবি নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন।
অমিয়চন্দ্রকে সংসার জীবনে প্রবেশ ঘটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ডেনমার্কের বিদূষী রমনী হেয়রডিস সিগরের সঙ্গে তার বিবাহ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে কবি এই রমনীর নাম দিয়েছিলেন হৈমন্তী। এই 'হৈমন্তী'ই পরে যথার্থ একজন আশ্রমিকা হয়েছিলেন। এদিকে সাহিত্য সহকারী হিসেবে অমিয়চন্দ্র কবির ভ্রমণ সঙ্গী হবার সুযোগ পেয়েছিলেন বারবার। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রবীন্দ্রনাথের সহকারী হয়েছিলেন অমিয়। বিদেশে ভ্রমণকালে অমিয়চন্দ্রের সেবায় ও সাহচর্যে মুগ্ধ হয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। বাহিরে তোমার যা পেয়েছি সেবা/ অন্তরে তাহা রাখি/ কর্মে তাহার শেষ নাহি হয়, প্রেমে তাহা থাকে বাকি।'
১৯৩৩ সালে রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অমিয় চক্রবর্তী অক্সফোর্ডে গবেষণা করতে যান। কর্মসূত্রে যোগ না থাকলেও রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতনের সঙ্গে অমিয় চক্রবর্তীর সম্পর্ক আমৃত্যু অটুট ছিল। কবির কাছে অমিয় চক্রবর্তীর সাহচর্য যেমন প্রয়োজন ছিল না তেমনি আবার অমিয় বাবুর জীবনের রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যের ফলে অমিয়চন্দ্র হতে পেরেছেন বিশ্বপথিক-রবীন্দ্রনাথের যথার্থ উত্তর সাধক এবং মানবসন্তান। অমিয় চক্রবর্তী স্বীকার করেছেন, রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতনের কাছে যা পেয়েছি তা আমার অন্তরের পাথেয়।