২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Rabindranath: রবীন্দ্রনাথের উপনয়নে দুষ্টুমি ও বিশ্বদেবতার দীক্ষা
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2022-11-07 20:30:54   Share:   

সৌমেন সুর: ১৮৭৩ সাল, রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন ১১ বছর ৯ মাস। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে সে সময় তাঁর উপনয়নের আয়োজন হয়। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠিক করলেন একসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, সোমেন্দ্রনাথ ও নাতি সত্যপ্রসাদের উপনয়নের ব্যবস্থা। রবীন্দ্রনাথের উপনয়নের সময় পুরোহিত ছিলেন শ্রী আনন্দচন্দ্র বেদান্ত বাগীশ এবং আচার্য ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। পৈতের নিয়ম অনুসারে বিভিন্ন রকম আচার অনুষ্ঠানের পরে গায়ত্রী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে ব্রহ্মচারী 'ভবতি ভিক্ষাং মে দেহি' এই মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমেই মা-বাবা-আত্মীয়-স্বজনের কাছে ভিক্ষা করে সেই ভিক্ষান্ন আচার্য গুরুকে দান করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্রহ্মচারী বাক সংযত হয়ে পরে গায়ত্রী মন্ত্র জপের পর হবিষ্যান্ন গ্রহণ করেন।

উপনয়নের পর গায়ত্রী মন্ত্র জপের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ মনে মনে কোনও এক অসীম শক্তির উৎস সন্ধানে নিজেকে নিয়োজিত করলেন। এই মন্ত্র জপ করার সময় তিনি গ্রহমণ্ডলী এবং ব্রহ্মাণ্ডের বিরাট রূপকে কল্পনায় অনুভব করতেন। উপনয়নের পর তিনদিন নির্জন বাসের নিয়ম। এই তিনদিন ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখতে হয়। কারও মুখ দর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, একমাত্র মা ছাড়া। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, 'তিনজন তেতলার ঘরে তিন দিনের জন্য আবদ্ধ হইলাম। সে আমাদের ভারী মজা লাগিল। পরস্পরের কানের কুণ্ডল ধরিয়া টানাটানি বাঁধাইয়া দিতাম। একটা বায়া ঘরের কোণে পড়িয়াছিল, বারান্দায় দাঁড়াইয়া যখন দেখিতাম নীচের তলা দিয়া কোনও চাকর চলিয়া যাইতেছে-ধপাধপ শব্দে আওয়াজ করিতে থাকিতাম, তাহারা উপরে মুখ তুলিয়াই আমাদিগকে দেখিতে পাইয়া তৎক্ষণাৎ মাথা নিচু করিয়া অপরাধের আশঙ্কায় ছুটিয়া পালাইয়া যাইত।'

উপনয়ন শেষ হওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ গায়ত্রী মন্ত্র আবৃত্তি এবং তাঁর অন্তরের উপলব্ধির কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, আবৃত্তির সময় তাঁর চোখ বেয়ে জল পড়ত। কেন পড়ত সেটা বুঝতে পারতেন না। আসল কথা, অন্তরের অন্তঃপুরে যে কাজ চলছে, বুদ্ধির ক্ষেত্রে সব সময় তাঁর খবর এসে পৌছয় না। পরবর্তী জীবনে রবীন্দ্রনাথের নিজের ক্ষেত্রেও এই মুল্যবান তথ্যটি ভীষণভাবে প্রযোজ্য। তিনি জীবন স্মৃতিতে লিখেছেন, 'শান্তিনিকেতনে এসেই আমার জীবনে প্রথম সম্পূর্ণ ছাড়া পেয়েছি বিশ্ব প্রকৃতির মধ্যে। উপনয়নের পরেই আমি এখানে এসেছি, এখানে বিশ্বদেবতার কাছ থেকে পেলাম সেই দীক্ষা।'


Follow us on :