Share this link via
Or copy link
সৌমেন সুর: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় একটি কালজয়ী নাম। সাহিত্য রসিকদের হৃদয়ে তারাশঙ্কর আমৃত্যু বেঁচে থাকবেন। তাঁর গল্প বলার স্টাইল, ভাষা, চরিত্র গঠন চোখ বুজে বলা যায় অনবদ্য। তারাশঙ্করের গল্প উপন্যাসগুলো যদি চলচ্চিত্রায়িত না হত তাহলে আমরা জানতেই পারতাম না, উপন্যাসের পেছনে তিনি একজন মস্ত বড় গীতিকার। সিনেমায় তিনি প্রথম গান লেখেন তারি লেখা গল্প 'কবি' ছবিতে। রবিন মজুমদারের কন্ঠ আর অনিল বাগচীর সুরে এবং লেখকের কথায় গানগুলো মন ছুঁয়ে যায়। কাব্যরসে ভরপুর, প্রেম ভালোবাসা, সব মিলিয়ে সংগীত মুখর ছবিটি দর্শক নিয়েছিল। পাশাপাশি রাইকমল, চাপাডাঙার বউ, হাঁসুলী বাঁকের উপকথা, ডাক হরকরা, , মঞ্জুরি অপেরা তারই কাহিনী একের পর এক গান লিখেছেন লেখক। সেই গান গীতা দত্ত, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, পঙ্কজ মল্লিক প্রভৃতি স্বনামধন্য গায়করা গান গেয়েছেন।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় গীতিকার হয়েছেন একটু বেশি বয়সে। প্রথম দিকে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন। ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা পড়লে এক বছর জেল হয়। এরপর জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, তিনি সাহিত্য সেবায় দেশকে পূজিত করবেন বলে, সূচিত হয় সাহিত্য সাধনা। হাঁসুলী বাঁকের উপকথা ছবির জন্য তপন সিনহা বীরভূমে লোকেশন দেখতে বেরিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গী ছিলেন তারাশঙ্কর। তিনি ক্রমাগত হেঁটে চলেছেন আর, বিভিন্ন অঞ্চলের মাহাত্ম্য নিয়ে ইতিহাস বলছেন। ডাক হরকরা ছবিতে গীতা দত্তের মুখে 'কাঁচের চুড়ির ছটা, ছেঁয়া বাজের ছলনা/ আগুনেতে ছটা নাকি, ছটায় আগুন বলো না... ' তারাশঙ্করের লেখা এই গানটি আজও জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তিনি যেসব ছবিতে গান লিখেছেন তার প্রায় সবকটি কাহিনী তারই।
কত গুণী মানুষ শিল্পের সম্ভারে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। শিল্পী আলোয় আসে, আলোয় মিশে যায়, রেখে যাই তার অমর কীর্তি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তারই মাঝে একজন। তিনি ছিলেন, আছেন, থাকবেনও।