১১ মে, ২০২৪

Durga Puja: পুজোয় ফেরিওয়ালা মেয়ের চিন্তাভাবনায়... (শেষ পর্ব)
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-08-25 19:38:30   Share:   

সৌমেন সুরঃ (দুর্গাপুজো সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনার সমাপ্তি পর্বের শেষ খন্ড) দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল। ষষ্ঠীর দিন মোটামুটি দর্শনার্থীদের ভিড়। বুনিদের দোকানটা ভালই চলছে। বুনি একমনে কাস্টমারদের খাবার দিয়েই চলেছে। আজ বুনিকে একটু অন্যরকম লাগছে। খুব ভাল করে সেজেছে ও। ওর রূপের টানে মানুষ বেশি করে ভিড় করছে। সন্ধে সাতটায় দোকান চালু হয়েছে। রাত দশটার মধ্যে সমস্ত মাল শেষ। দোকানের সমস্ত মালপত্র ভ্যানে ওঠায়। একবুক আনন্দ নিয়ে বাবা মেয়ে ও বাচ্চা ছেলেটা ভ্যানে উঠে পড়ে।

বাড়ি এসে একটু ফ্রেশ হয়ে বুনির বাবা দিনান্তের আয়ের টাকা পয়সা গুলো গুনতে থাকে। একমুখ হাসি নিয়ে বুনিকে বলে, 'হাজার তিনেক টাকা লাভ হয়েছে।' বুনি খুশি হয়ে বাবাকে বলে, 'বাবা, আমি তোমার হাসিমুখটা দেখতে চাই। গতবছর মুখ হাড়ি করে ছিলে, তখনই আমি চিন্তা করেছিলাম, সামনের পুজোয় আমি তোমাকে সাহায্য করবো।'

খাবারের জিনিস দ্বিগুন করে সপ্তমীতে চললো দুজনে দোকানে। মানুষের এত ভিড়, রাত নটার মধ্যে সমস্ত মাল শেষ। অষ্টমীর দিনও তাই। সারা বাড়িতে মাত্র তিনজন প্রাণী। বুনি ও তার মা বাবা। প্রত্যেকের মনে চরম আনন্দ। সকাল সকাল পুজো দিয়ে বুনি খাবার বানাতে বসে যায়। আজ নবমী, খাবার চারগুন বেশি। বিকেলের রান্না শেষ। বুনি স্নান সেরে জিন্স ও কুর্তি পরে মালপত্র নিয়ে ভ্যানে উঠে পড়ে। সঙ্গে বাবা ও বাচ্চা ছেলেটি। আজ তিনটে ভ্যান। বুনির বাবা একটু ইতস্তুত করেছিল, চারগুন খাবার! যদি বিক্রি না হয় তাহলে তো- বুনি বাধা দিয়ে বাবাকে বলে, 'বাবা, ব্যবসা হলো সাপ লুডো খেলার মতো, বিক্রি হলে বিশাল ব্যাপার, না হলে হতাশা। দেখো বাবা, আজ শেষ দিন। ব্যবসায় একটু ঝুঁকি নিতে হয়। তুমি অত ভেবো নাতো, যা থাকে কপালে। মা নিশ্চই গরীবকে মারবেনা।'

আজ মানুষের ঢল নেমেছে। বুনির দোকানে ভীষণ ভিড়। সব ধরনের খদ্দের জমায়েত হয়েছে দোকানে। রাত একটার মধ্যে সমস্ত মাল নিঃশেষ। সবকিছু গুছিয়ে মাঝরাতে বাড়ি ফেরে বুনিরা। আজ বাড়ির সমান মনে প্রচন্ড আনন্দ।" বাবা মা টাকাপয়সা গুনে বুনিকে বলে, 'মা আমি সারাজীবন এত টাকার লাভ চোখে দেখিনি। ২৮ হাজার টাকা। সব তোর করিশ্মা।' বুনু প্রতিবাদ করে, 'না বাবা, আমি কেউ না, সব ঐ ওপরওয়ালা। উনি যদি সহায় না হতেন তাহলে আজকের এই আনন্দের মুখ আমরা কেউ দেখতে পেতাম! যাক বাবা, কাল আমাদের ছুটি। আমরা গঙ্গার ঘাটে মায়ের বিসর্জন দেখবো। আর মনে মনে বলবো, মা আবার এসো তুমি। সমস্ত গরীব দিনমজুরদের ঘরে আলো দেখাও, সবাই যেন সুখে শান্তিতে থাকতে পারে' বাবা মা ভক্তিভরে হাতজোড় করে। তিনবার শব্দ করে ওঠেন, 'জয় মা দুর্গা।' দূর থেকে প্রথম ভোরের ঢাকের আওয়াজ ভেসে ওঠে। ঢাকিরা ঢাকে বিসর্জনের বোল তোলে। (সমান্ত)।


Follow us on :