Share this link via
Or copy link
সৌমেন সুর: কবি একসময় কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত হন। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে। কিছুদিন অধ্যাপনা করার পর এ চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর তাঁর জন্মস্থান বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে নিযুক্ত হন। কর্মযজ্ঞ যথাযথভাবে চলছিল, কিন্তু আকাশের কোনে কালো মেঘ দেখা দিলো। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হলো, কিন্তু দেশভাগের ফলে তিনি ও তাঁর পরিবার সবকিছু ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন।
কলকাতায় এসে অধ্যাপনার চাকরি খুঁজতে থাকেন, তখন খড়্গপুরের কলেজে অধ্যাপক দরকার--সে বিষয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। হিমাংশু ভূষন সরকার পূর্ববঙ্গ থেকে খড়্গপুরে এসে একটা কলেজে তৈরি করেন। এই কলেজেই জীবনানন্দ অধ্যপক হিসেবে নির্বাচিত হন। সালটা ১৯৪৮। সেই সময়ে কবির অনেকগুলি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ--মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির। এই সময় খড়্গপুর কলেজে একমাত্র ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন সরোজ কুমার ভট্টাচার্য। তাঁর একার দ্বারা এই বিভাগ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। ১৯৫০ সালে কবি নির্বাচিত হন এই বিভাগে। কলকাতা থেকে খড়্গপুরের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। খড়্গপুরকে ভালোবেসে ফেলেন কবি। তিনি ছিলেন নির্জনতাপ্রিয় ও স্বল্পভাষী। পরিবেশের সঙ্গে তিনি মানিয়ে নিয়ে ছিলেন সুন্দরভাবে। খড়্গপুর রেল কোয়াটার্স, রেল কারখানা, লাল মাটির পথ, পুকুর, ধানক্ষেত এসব দেখে কবি মুগ্ধ হয়ে গেছিলেন।
শোনা যায়, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের জন্য তাঁর মন উতলা হয়ে যেতো। প্রতি সপ্তাহের শেষে তিনি কলকাতায় চলে আসতেন। অসুস্থ স্ত্রীর জন্য একদিন তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এইভাবে চলতে চলতে কলেজের চাকরীতে অনিয়ম এসে যায়। একদিন তিনি বাধ্য হয়ে চাকরীতে ইস্তফা দেন। কবির জন্মের একশো বছর পুর্তিতে খড়্গপুর কলেজের বাংলা বিভাগের সামনে তাঁর আবক্ষ মুর্তি বসানো হয়। কথা হলো, কবি জীবন সংগ্রামে ছিলেন দায়িত্ববান মানুষ। সংসার ও কাব্য সমানভাবে চালিয়ে গেছেন। কিন্তু ভাগ্যের লিখনে মানুষের Destiny বিধাতা লিখে রাখেন আগেই। কবির জীবনেও বুঝি তাই ছিল। যাই হোক খড়্গপুর কলেজে তাঁর কার্যকাল ছিল মাত্র পাঁচমাস বারো দিন। [তথ্যঋণ--অর্নব মিত্র]