Share this link via
Or copy link
প্রসূন গুপ্তঃ সঙ্গীতের অমূল্য সম্পদ ছিলেন মান্না দে (Manna Dey)। অনেকের মতে ভারতীয় সঙ্গীত (Music) জগতের সব ধরনের গান বিচার করে মান্না দে ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। অবিশ্যি এই নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু আজ নয়। আজ মান্নাবাবু ১০৫-এ পা দিলেন। জন্মদিবস তাঁর। তাঁকে নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে, কিন্তু আজ কিছু প্রায় অজানা তথ্য তুলে ধরতে চাই।
মান্না দে মনে করতেন, তাঁর উত্থান বলে কিছু ছিল না। তিনি মুম্বইবাসী হলেও হিন্দি ছবির নায়কদের লিপে তাঁর কন্ঠ থাকতো খুবই কম। মুম্বইয়ে তিনি সহযোগীতা পেয়েছেন প্রায় সব সঙ্গীত পরিচালকের এবং সেসব গান ছিল অসাধারণ এবং চিরকালীন। তিনি শচীন দেববর্মনের সহকারী ছিলেন। কাজেই শচীন কর্তার সুরে প্রচুর গান গেয়েছেন। একই সঙ্গে নায়কদের লিপে তাঁকে দিয়ে নিয়মিত গান করিয়েছেন রাহুল দেববর্মন। কিন্তু তাঁকে বিশেষ পছন্দ করতেন রাজ কাপুর। রাজ নিজে মান্নার গানে লিপ দিয়েছেন বহুবার। রাজ বলতেন, মান্নাজির গান আমার অভিনয়কে সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু মান্নার উত্থানের অন্যতম হোতা কমেডিয়ান মেহমুদ।
দেব আনন্দ ও শচীন দেবের বন্ধুত্বের গল্প সর্বজনবিদিত। দেব সাহেব কিশোর কুমার ছাড়া নিজের গান গাইতেন না। একবার দেবের প্রোডাকশনে একটি ছবি "ছুপা রুস্তম"। সেখানে একটি কাওয়ালি গান ছিল। দেব শুনলেন গানটি গাইবেন মান্না। তিনি সোজা শচীনকর্তাকে বললেন, দাদা ইস গানেমে কিশোরকো লিজিয়ে। শচীন তাঁকে কড়া ভাবে বললেন, এটা গাইবার ক্ষমতা মান্নারই আছে। ব্যস আর একটিও কথা নয়। সীতা অউর গীতা ছবিতে সঞ্জীব কুমারের লিপে গলা দিয়েছিলেন কিশোর কিন্তু ধর্মেন্দ্রর লিপে গাইবে কে? পরিচালক রমেশ সিপ্পি, রাহুল দেববর্মনকে বললেন, তাহলে ধর্মেন্দ্রর লিপে রফি সাহেবকে নিয়ে এসো। রাহুল কারুর কথার ধার ধারতেন না। তিনটি গানই গাওয়ালেন মান্না দে কে দিয়ে। সিপ্পিদের পরের ছবি শোলেতে অমিতাভের লিপেও গান গেয়েছিলেন মান্না।
একটা সময় রাজেশ খান্না ছিলেন এতটাই সর্বেসর্বা যে তাঁর কথা ফেলতে পারতেন না প্রায় কেউই। বাবুর্চি ছবি তৈরি হচ্ছে, সুরকার মদনমোহন। রাজেশ বললেন, তাঁর গান যেন কিশোরই গায়। অথচ দুটি গানই ছিল ধ্রুপদী। মদন সোজা গিয়ে পরিচালক ঋষিকেশ মুখার্জিকে জানালেন। ঋষিবাবুকে রাজেশ খুব ভক্তিশ্রদ্ধা করতেন। ঋষিবাবু সটান রাজেশকে বললেন, মান্না গান গাইবে, যদি তোমার পছন্দ না হয় তবে তোমার চরিত্রে সঞ্জীব কুমারকে নিয়ে আসবো। ব্যস রাজেশ চুপ।
মান্না দে ছিলেন উত্তর কলকাতার ঘটি এবং গোড়া মোহনবাগানী। কিন্তু শচীন কর্তার পাল্লায় পরে দিব্বি গড়গড় করে বাঙাল কথা বলতেন। শচীন কর্তা ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের কট্টর সমর্থক। মুম্বাইয়ে রোভার্স কাপের ফাইনালে ইস্ট-মোহনের খেলা থাকলেই শচীনকর্তা, মান্না দে কে নিয়ে মাঠে যেতেন। ইস্টবেঙ্গল গোল করলেই শিশুর মতো চিৎকার করতেন। বেচারা মান্না বিমর্ষ। কর্তা মান্না কে বলতেন, মানা চেচাইস না ক্যান। কি আর করা বেচারা মান্নাকে হাততালি দিতেই হতো।
এরকম অনেক গল্প আছে জানাবো আগামীতে।