১৭ মে, ২০২৪

Special:আধুনিক বাংলা কবিতায় জীবনানন্দ দাশের স্থান (দ্বিতীয় পর্ব)
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-04-10 10:47:26   Share:   

জীবনানন্দ দাশ বাংলার প্রাণকে খুঁজে পান নরম ধানের গন্ধে, ঘ্রাণে, হাঁসের পালকে, চাঁদা সরপুটিদের সুবাসে, কিশোরীর চাল ধোঁয়া ভিজে হাতে, লাল লাল বটফলের ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতায়। বিষন্ন চড়াই, শ্যামার গান, কাকের শব্দ, কুকুরের উদাস ডাক, খঞ্জনার নাচ, গাঙশালিখের ঝাঁক, ধবল বক, লক্ষ্মী পেঁচা, শঙ্খ চিল, আম কাঠাঁলের গাছ, কীর্তন-ভাসান-রুপকথা-যাত্রা-পাঁচালীর নিবিড় ছন্দ। এমনি আরও কত অন্তরঙ্গ ছবি তাঁর কবিতার বিষয়, প্রিয় অনুষঙ্গ।

তাঁর কবিতায় বিষন্নতা আছে, আছে স্বপ্নালোকের অভিসার বাসনা। কিন্তু স্বপ্নাভিসারই তাঁর কাব্যের শেষ কথা নয়। তাঁর শেষ পর্বের অনেক কবিতায় কঠোর বাস্তবতার স্পর্শ রয়েছে। সমাজের নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাত কবিমনে ঢেউ তোলে। বাস্তবের নানা জটিলতা ঘাত-প্রতিঘাতের নানা তরঙ্গে তিনিও বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। তবে তা কখনই সোচ্চার নয়। কবিতায় চির যৌবনের জয় দৃপ্ত ঘোষণা নেই, নেই অগ্নিবীনার সুর। তিনি সমাজের রুক্ষতায়, মানুষের আচরনে ব্যথা পান। মাঝে মাঝে তাঁর মনে হতাশার ছবিও উঁকি মারে। এ যুগে কোথাও কোনও আলো, কোনও ক্লান্তিময় আলো চোখের সমুখে নেই যাত্রিকের।

তবে হতাশাই শেষ কথা নয়। এরপরেও আছে আশার আলো। বিশ্বাসের ছবি। জীবনানন্দের কবিতাতে শুনি সেই আশ্বাসের সুর। তাঁর লেখায় ধ্বনিত হয় গভীর প্রত্যয়ের ঝরনা। জীবনানন্দ গতানুগতিক প্রবাহের কবি নয়। তিনি হলেন বিরল কবিদের একজন। তাঁর কবিতায় ভাষারীতি হলো বিশিষ্ট। তাঁর ছন্দ, শব্দ ব্যবহার আমাদের অভিভূত করে। প্রতীক ও চিত্রকল্প ব্যবহারে তিনি অনন্য। জীবনানন্দ দাশের প্রধান ও প্রথম পরিচয় তিনি কবি। কবিতার সাধনাতেই তিনি অধিকাংশ সময় মগ্ন থেকেছেন। জীবনানন্দ দাশের কবিতা সবার জন্য নয়, কবিতা রসিকদের জন্যই তাঁর কবিতা।


Follow us on :