১৪ মে, ২০২৪

Rabindranath: স্বপ্ন-ব্যথা-সৃষ্টি ও রবীন্দ্রনাথ
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-06-13 10:54:37   Share:   

সৌমেন সুরঃ কলকাতায় সেই সময় হঠাত্ এক মারণ ব্যাধি উপস্থিত। প্লেগ। তখন এই রোগের ওষুধ বেরোয়নি। বহু লোক মারা যায়। এমন এক সংকট মুহুর্তে মানুষের সেবায় নামলেন ভগিনী নিবেদিতা। রবীন্দনাথও নিবেদিতার পাশে দাঁড়ালেন। দিনরাত এক করে কাজে ব্যাপৃত থাকলেন দুজনেই। এই মানবিক কাজের মধ্যে কবির লেখালেখি বন্ধ হয়নি--ক্ষণিকা, কল্পনা, কথা, কাহিনী প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ। মানুষের জন্য লেখায় কবির একটা দায়বদ্ধতা ছিল। সৃষ্টির ফোরামে কখনো তিনি কর্মে ফাঁকি দেননি। এতকিছুর পরও কবির মনে হতে লাগলো কিছুই তো হলো না। পুরোনো স্মৃতি মনে পড়তে থাকে তাঁর। বাবার সঙ্গে তাঁর শান্তিনিকেতনে ঘোরা। সেই সবুজ প্রান্তর, লাল মাটি, ধানক্ষেত, গাছগাছালি সবকিছু তাঁকে অসীম এক আনন্দনিকেতনে পৌছে দিয়েছিল। সেই শান্তিনিকেতন ছবির মতো ভেসে উঠলো আবার। বড় নিরিবিলি, বড় শান্তির জায়গা। 

এই শান্তিনিকেতনে কবি চাইলেন অন্য একটা কিছু করতে। এমনকিছু যা সারা বিশ্ব মনে রাখবে। ১৯০১ সালে কবি এখানে প্রতিষ্ঠা করলেন মানুষ গড়ার কারিগর। প্রতিষ্ঠা হলো বিদ্যালয়। বোলপুর ব্রহ্মচর্যাশ্রম। কিন্তু শুধু আশ্রম গড়লেই তো হবে না--এর পেছনে বিশাল খরচ। সেই অর্থ কোথায়! অবশেষে পুরীর সমুদ্রতটে সুন্দর বাড়ি, বই ঠাসা লাইব্রেরী, সব বিক্রি করে করে তাতেও কোলালো না। শেষটায় স্ত্রী মৃণালিনী দেবী পাশে দাঁড়ালেন। সমস্ত গহনা তুলে দিলেন কবির হাতে। এছাড়াও নিতে হলো পৈতৃক জমিদারির আয়। এবার কবির স্বপ্ন সার্থকের পথে এগিয়ে চললো। ছাত্রদের লেখাপড়া শুধু নয়, গান শেখানো, খেলাধূলা, সৃজনে উত্সাহ কোনো কিছু বাদ গেল না। 

একদিকে কবির স্বপ্নের কূল গড়তে লাগলো, অন্যদিকে কবির কূল ভাঙতে লাগলো। ছাত্রদের খাওয়ানো, স্নান করানো, ঘুম পাড়ানো, রান্না করা, এক অমানুসিক পরিশ্রমে কবির স্ত্রী অসুখে পড়ে গেলেন। মাত্র এক বছর বাদ ১৯০২ সালে মৃণালিনী দেবী মারা গেলেন। মা-হারা ছোট্ট শমীন্দ্রর বয়স তখন আট। তাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য আলমোড়ায় বসে রচনা করতে লাগলেন একের পর এক কবিতা। তৈরি হলো 'শিশু' কাব্যগ্রন্থ। যাতে সব লেখাই মাকে ঘিরে। কিন্তু আবার পতন ঘটলো। মাত্র ১১ বছর বয়সে শমীন্দ্র মারা গেল। কবি ভীষণ ব্যথা পেয়েছিলেন শমীন্দ্রের মৃত্যুতে। কবির মন পুড়তে পুড়তে অন্যদিকে তৈরি হতে থাকে লেখা ও গান। যা আমাদের চিরকালীন সম্পদ হয়ে, ধ্রুবতারার মতো বিরাজ করছে।    


Follow us on :