০৯ মে, ২০২৪

Durgapuja: দুর্গাপুজোকে কেন 'কলির অশ্বমেধ যজ্ঞ' বলা হয় জানেন?
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-08-28 17:46:32   Share:   

সৌমেন সুরঃ দুর্গাপুজোকে বলা হয় কলির অশ্বমেধ যজ্ঞ। এই যজ্ঞের সূচনা লগ্ন মহালয়ার ক্ষণ থেকে। তত্ত্বগতভাবে মহালয়ার সঙ্গে দেবীপুজার প্রত্যক্ষ কোনো সম্পর্ক না থাকলেও সাধারণভাবে এই দুটি উৎসবকে আমরা একই উৎসব রূপে চিহ্নিত করে থাকি। বিশেষ করে বাঙালির কাছে এই শুভ তিথিটি কাব্যিকভাবে স্থান পেয়েছে। দেবী পার্বতী তাঁর সন্তানদের নিয়ে কৈলাস থেকে আসছেন বাপের বাড়ি। পিতা হিমালয় আর মা মেনকার সঙ্গে মানব মনও অপেক্ষা করে থাকে কন্যা উমার উপস্থিতির জন্য। দেবী আসেন বাংলার কন্যা হয়ে। মানুষ কল্পনা করে এই মহালয়ার পুণ্য তিথিতে দেবী কৈলাস থেকে বাপের বাড়ি যাত্রা করেন। মহালয়ার অর্থ দেবী আগমনের সাত দিনের অপেক্ষা। আর ধর্মের ইতিহাস নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তাদের মতে অর্থাৎ পন্ডিতের মতে 'পিতৃপুরুষ' উপাসনা ধর্মভাবনা সৃষ্টির কারণ। মহালয়ার দিনটি সেই পিতৃউপাসনার দিন। পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে চলে জলদান। সমস্ত অনুষ্ঠানটির মধ্যে আমাদের ভারতবর্ষের সংস্কৃতির মূল ভাবনাটি ফুটে ওঠে। মহালয়ার পরেই শুরু হয়ে যায় দেবীপক্ষ। এক অমাবস্যা থেকে পরের পূর্ণিমা পর্যন্ত আমাদের আরাধনার কাল। সেই আরাধনার সূচনা হয় মহালয়ার পিতৃঅর্চনার মধ্যে দিয়ে। এরপরই দেবীপক্ষের মূল অংশে চলে যায়।

কাঠক সংহিতায় দেবী অম্বিকাকে শতরূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে ' শরদ্বৈ অম্বিকা।' শরৎরূপী অম্বিকার পুজো বলেই তো শারদীয়া। পন্ডিতগন বলেন, এ হলো অকালবোধন। অকালবোধন বলা হয়েছে এইজন্য যে,  আমাদের ছ' মাসে দেবতাদের একদিন, অন্য ছ'মাসে একরাত। মাঘ থেকে আষাঢ় এই ছয় মাস উত্তরায়ন। দেবতারা জাগ্রত থাকেন। শ্রাবণ থেকে পৌষ এই ছয় মাস দক্ষিণায়ন। দেবতারা নিদ্রিত থাকেন। ত্রেতাযুগে রামচন্দ্র রাবণ বধের জন্য দেবী দুর্গার শরণাপন্ন হয়েছিলেন। নিদ্রিত দেবতাকে জাগ্রত করেছিলেন বলে এই পুজোকে অকালবোধন বলে।

শস্যের সঙ্গে দেবীর নিগুঢ় সম্পর্ক। বেবির আর একটি রূপ হল শস্যবধূ। এই শস্যবধূকে বলা হয় নবপত্রিকা। নবপত্রিকায় কলা গাছের সঙ্গে থাকে কচু, হরিদ্রা, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, মানকচু, অশোক এবং ধান। এইভাবে বিভিন্ন শস্যের সঙ্গে দেবীকে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেবীর শাকম্ভরী রূপটি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। শস্যদায়িনী রূপে দেবীর দশটি অস্ত্রের সঙ্গে দশ রকমের শাককেও যুক্ত করা হয়েছে। যেমন,  পাতা, অগ্র, মূল, কবীর, ফল, কাণ্ড, ত্বক, ফুল, অস্থিরূঢ়ক, কবুক। যাইহোক, আমাদের জীবনের নানা অংশ পিতৃপুরুষ বন্দনা থেকে শাকান্ন পর্যন্ত দেবীপুজোর সঙ্গে জড়িত।

এই পূজো আজ বিশ্ববন্দিত। প্রচুর মানুষের মনে ফুটে ওঠে আনন্দের ফোয়ারা। কারণ সারা পুজো জুড়ে চলে অভাবনীয় অর্থনীতি। গরীব, দিনমজুর, অন্য শ্রেণীর মানুষ দুটো পয়সা হাতে পায়। সুখের বিলাসে দিন কাটায়। তাই এই মহাজাগ্রত সর্ব মানব মিলন পুজোকে কখনোই রাজনৈতিক কলুষতায় কলুষিত হতে দেওয়া উচিত নয়। আসুন এই পুজোকে কেন্দ্র করে মাকে প্রার্থনা জানাই- সবাই সুখে থাক, আনন্দে থাক, শান্তিতে বিরাজ করুক। জয় মা দুর্গা। তথ্যঋণ- পূর্বা সেনগুপ্ত


Follow us on :