১৩ মে, ২০২৪

Rabindranath: নাস্তিকতা ও রবীন্দ্রনাথ (প্রথম পর্ব)
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-06-01 10:30:30   Share:   

সৌমেন সুরঃ যে নাস্তি শব্দ থেকে নাস্তিক শব্দের ব্যুত্পত্তি তার তিনটে অর্থ হতে পারে-- যে ঈশ্বর মানে না, যে পরলোক মানে না এবং যে বেদের প্রামান্য মানে না। 

রবীন্দ্ররচনাবলিতে নাস্তিকতা শব্দটি এসেছে বহুবার। তিনি হয়ত ঈশ্বরদ্রোহী হিসেবে শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন। দেখা গেছে নাস্তিকদের প্রতি রবীন্দ্রমনন যেন অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। নাস্তিকরা সমাজপতিদের শেখানো ধারণা অনুযায়ী নিন্দার পাত্র আর অকল্যাণের প্রতীক। ঈশ্বরে অবিশ্বাসী বলে ঘৃণাও করেন অনেকে। এই নাস্তিকদের চরিত্রে কবি এঁকে দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ কিছু মানবীয় গুণ। উন্নত করেছেন তাঁদের। পৌঁছে দিয়েছেন সামাজিক উচ্চতায়। 

রবীন্দ্রনাথের 'চতুরঙ্গ' গল্পে জ্যাঠামশাই জগমোহন চরিত্রটি সেকালের নাস্তিকের আদলে সাজানো। যখন এই চরিত্রটি পূর্ণরূপ পেলো তখন দেখা যায় মনুষ্যত্বের মাপকাঠিতে বিশাল উঁচুতে তাঁর স্থান। গল্পের চলনে দেখি, জগমোহন ঈশ্বরে অবিশ্বাশী, পাশাপাশি তাঁর ভাই হরিমোহনের ঈশ্বরে অবাধ বিশ্বাস। এদিকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর মুখে যুক্তি বসিয়েছেন, "ঈশ্বর যদি থাকেন তবে আমার বুদ্ধি তারই দেওয়া, সেই বুদ্ধি বলছে ঈশ্বর নেই। অতএব ঈশ্বর বলছেন যে ঈশ্বর নেই।" এই জায়গা থেকে আস্তিক্য ধর্মকে ডুবিয়ে দেওয়াই জগমোহনের ধর্ম হয়ে ওঠে। আর সে নাস্তিক্য ধর্মের প্রধান অঙ্গ হয়ে ওঠে মানুষের ভালো করা। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে খাওয়াবে এটা জগমোহনের মনে একবার স্থান পায়, সেটা ভাই হরিমোহনের কাছে ব্যক্ত করলে হরিমোহন আপত্তি জানায়। 

তখন জগমোহন বলে, 'তোমার ঠাকুরের ভোগ তুমি রোজ দিচ্ছ, আমি কিছু বলি না, আমার ঠাকুরের ভোগ আমি একদিন দেবো, এতে বাধা দিও না।' এই কথা শুনে হরিমোহনের ছেলে পুরন্দর হুমকি দিলে জগমোহন হাসি মুখে বলে, 'ওরে বাদর, আমার দেবতা যে কত বড় জাগ্রত তা তাঁর গায়ে হাত দিতে গেলেই বুঝবি, আমাকে কিছুই করতে হবে না।' এখানে দুই মনের দুই মানুষের 'আমার দেবতা' 'তোমার দেবতা' এবং কে কত বড় জাগ্রত, তা জানানোর ছলে আমরা একটা অর্থ খুঁজে পাই, বার্তা দেখতে পাই। (চলবে) তথ্যঋণ--অরুনাভ মিশ্র 


Follow us on :