১০ মে, ২০২৪

Dev Anand: দেব আনন্দের শতবর্ষে অজানা কিছু কাহিনী...
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-09-25 14:09:45   Share:   

চিরঞ্জিত চক্রবর্তী (অভিনেতা ও বিধায়ক): রাত পোহালেই ভারতীয় চলচিত্রের অন্যতম সেরা রোমান্টিক নায়ক প্রয়াত দেব আনন্দের শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। সিএন পোর্টাল থেকে এই শতবর্ষ নিয়ে আমাকে কিছু লিখতে বলা হলো। আমি কিন্তু ওই তথাকথিত 'কবে জন্ম, কটি ছবি বা সেরা ছবি' ইত্যাদি নিয়ে লিখবো না বরং কিছু অন্য কথা লিখি।

দেবসাহেব আমার প্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম। আমি যখন ছবির জগতে আসি তখন অনেক কথার মধ্যে জানতে পেরেছিলাম যে দেব আনন্দ নাকি সারাদিনে একটি আপেল খেয়ে দিন কাটান। শরীরটা রোগা রাখার জন্য। এ ছাড়া শুনেছিলাম তিনি নাকি পেট পাতলা রাখতেন ওই একই কারণে। অদ্ভুত লেগেছিলো। ভেবেছিলাম আমিও ওই একটা আপেল খেয়ে দিন কাটাবো। কিন্তু অবাস্তব হয়েছিল সেই পরিকল্পনা। যাই হোক, আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করেন যে কেমন অভিনেতা ছিলেন তিনি। আমি বলবো, তিনি রোমান্টিক নায়ক ছিলেন সেই ১৯৪৬ থেকেই।

আমরা বলি কমার্শিয়াল ছবি আর ইন্টেলেকচুয়াল বা আলাদা ছবি। তা দেবসাহেব টিপিকাল কমার্শিয়াল ছবিই করে গিয়েছেন চিরকাল, ব্যতিক্রম গাইড। এখানে নিজের একটু উদাহরণ দিতেই হয়। আমার শুরুটা মানিকদা বা সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে। আমি তাঁর সহকারী ছিলাম এবং তাঁর একটি ডকুমেন্টারিতে অভিনয়ও করেছি। আমি নিজে অনেকগুলো ছবি পরিচালনা করেছি। চেষ্টা করেছি আলাদা ছবি করার, যেমন 'সংসার সংগ্রাম' বা 'ভয়'| কিন্তু তখন আমি রীতিমতো বাংলার অ্যাঙ্গরি হিরো, ফলে আমার 'বেদের মেয়ে জোসনা' ছবির ইমেজ থেকে বেরোনোর ব্যাপারটা দর্শক নিলো না। কাজেই আমাকেও টিপিকাল কমার্শিয়াল মারধর ও রোমান্টিক কমার্শিয়াল ছবিই করতে হয়েছে। ইদানিং অবিশ্যি কয়েকটা ভিন্ন ধরণের ছবি করলাম কিন্তু সে তো আজকের যুগ ধরেই।

দেবসাহেবের অনেক ছবিই দেখেছি। আগেকার সাদাকালো ছবিও। অবিশ্যি ওই পুরোনো ছবি টাটকা দেখিনি পরে দেখেছি। ৫০ দশক থেকে ৭০ দশকের মধ্যভাগ অবধি তিনি ছিলেন সুপারহিট নায়ক। গোয়েন্দা বা রহস্য ছবি মানেই ঠোঁটে সিগারেট দেওয়া দেব আনন্দ। অনেক ছবির প্রযোজক পরিচালক তিনিই ছিলেন। হরে রাম হরে কৃষ্ণ ছবি তো হিন্দি ছবিকে আলাদা ধারায় এনে দিয়েছিলো। তিনি দিলীপ কুমার বা রাজ কাপুরের মতো চরিত্র নিয়ে পরীক্ষায় বিশ্বাসী ছিলেন না। এরপর আরও ৩০/৩৫ বছর নিজের পরিচালনা বা প্রযোজনায় অসংখ্য ছবি করেছেন কিন্তু সিংহভাগই সুপার ফ্লপ। নিজের জায়গা থেকে তিনি কিন্তু নড়েননি। চালিয়ে গিয়েছেন। একবার কোনও এক মাল্টি প্রেক্ষাগৃহে অন্য একটা ছবি দেখতে গিয়েছি, দেখলাম দেব আনন্দের শেষ ছবিটি নাকি একটি স্ক্রিনে দেখানো হবে, পরে শুনলাম হবে না কারণ একটি মাত্র টিকিট বিক্রি হয়েছে।

দেবসাহেবের জীবনটাকে যদি দু'ভাগ করা যায় তবে দ্বিতীয় ভাগটি নির্মম। ওই ধরণের হিরো ফ্লপ শো করছে মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। দেব আনন্দের শেষ সময়টিও ভালো লাগে নি। বৃদ্ধ হয়েছেন অথচ মুখচোখের চামড়া যেন ঝুলে পড়েছে। শরীর রোগা রাখতে এই কোন ফর্মুলা কে জানে? আজ শতবর্ষের সময়ে একটি কথাই লিখবো, ভারতে হলিউড ধারার নায়ক যদি কেউ এসে থাকেন তবে তিনি দেব আনন্দ। প্রণাম দেবসাহেব।


Follow us on :