Share this link via
Or copy link
মণি ভট্টাচার্য: কখনও মুষড়ে পড়ছেন, কখনও গুমরে কাঁদছেন। কখনও বা একরত্তি ছেলের গন্ধ জড়ানো স্কুল ব্যাগে নিজের ছেলেকে খোঁজার চেষ্টা করছেন। তিনি আসলে মা। দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন ৫ বছরের সন্তানকে, স্বামী মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। শুক্রবার বিদ্যাসাগর হাসপাতালের শব কক্ষের বাইরে সৌরনীলের মায়ের কান্না দেখে কাঁদলেন অন্যান্যরাও। ভারসাম্য রাখার চেষ্টাও করলেন অনেকে। কিংবা কেউ কেউ সান্ত্বনাও দিলেন। কিন্তু ফুটফুটে এই সন্তান হারা মায়ের কাছে কি কোনও সান্ত্বনা যথেষ্ট! যতই সান্ত্বনা তিনি পান না কেন, এক লহমায় বদলে যাওয়া মায়ের জীবনে কি আর কখনও শান্তির ঘুম আসবে?
শুক্রবার সকালে একটি পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় মাত্র ৫ বছরের শিশু সৌরনীলের। না বিখ্যাত কোনও কিংবদন্তি পরিবারের সন্তান হলেও, মধ্যবিত্ত পরিবারে সৌরনীল বড় আদরের সন্তান ছিলেন, চলতি মাসের ২৫ তারিখ তাঁর জন্মদিন। জন্মদিনে সৌরনীলের ছোট্ট মনের, ছোট্ট আবদার ছিল পার্কে ঘুরতে যাবে। সে আশা তাঁর পূরণ হল না। দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন সৌরনীলের বাবাও। সংকট জনক অবস্থায় এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে চিকিৎসা চলছে তাঁর। আফসোস ছাড়া মধ্যবিত্ত পরিবারের আর কী বা করার থাকে? শুক্রবার দুপুরে বিদ্যাসাগর হাসপাতালের শবকক্ষের সামনে বসে কাঁদতে কাঁদতে আফসোস করতে থাকলেন সৌরনীলের মা। গুমরে গুমরে কেঁদে উঠলেন, আর আবছা গলায় বললেন, 'আমার ছেলেটাকে ওরা শেষ করে দিল, স্কুলের সামনে তো ওদের গাড়িটা আস্তে চালানো উচিত ছিল।'
শুক্রবার সকালে সৌরনীলের মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি স্থানীয়রাও। মুহূর্তে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। বেহালা চৌমাথায় জড়ো হয়ে সৌরনীলের মৃতদেহ রাস্তায় রেখে, পুলিসের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয়রাই। সে সঙ্গে উত্তেজিত জনতা পুলিসের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় ও বাস ভাঙচুর করে। সেই অবরোধ ওঠাতে এলে পুলিসের সঙ্গে খন্ডযুদ্ধ বাধে। রণক্ষেত্রের আকার নেয় বেহালা। কিছুক্ষন পর কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিস, ছত্রভঙ্গ হয় আন্দোলন। পরে সৌরনীলের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিস। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১১ জন আন্দোলনকারীকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিস।
গোটা ঘটনা পরিদর্শনে আসেন কলকাতা পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েল। এই দুর্ঘটনার জন্য শোক প্রকাশ করে তিনি সৌরনীলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেন। পাশাপাশি প্রথম থেকেই যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করেছেন সৌরনীলের স্কুল অর্থাৎ বড়িশা হাইস্কুল কতৃপক্ষ। সৌরনীলের বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন তারাই। ঘটনার তীব্রতা বুঝে লালবাজারের কাছে এই ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় নবান্ন। ইতিমধ্যেই দোষীদের কড়া শাস্তির বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বিদ্যাসাগর হাসপাতালে শবকক্ষের বাইরে অন্যদের থেকেও সান্ত্বনা পেয়েছেন সৌরনীলের মা। সব কিছু শুনে কেবলই কেঁদেছেন সৌরনীলের মা। আর প্রিয় ছেলের স্কুল ব্যাগ আঁকড়ে মুষড়ে পড়ছেন মাঝে মাঝে। এ অবস্থায় কোনও সান্ত্বনা সন্তান হারা মায়ের জন্য যথেষ্ট! এ উত্তর জানা নেই আমাদের।