মণি ভট্টাচার্য: 'দিদি, বড় হয়ে তোমার মত শিক্ষক হব, সবাইকে পড়াব।' বলেই দাদা-দিদিদের জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিল ছোট্ট ছেলেটি। বছর আটের (Minor) ছোট্ট ছেলে, দেবনাথের চোখে তখন বিরাট স্বপ্ন। চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে দেবনাথকে (Debnath Mondal) কাছে টেনে নেয়, ওর প্রিয় দিদিমণি।পরিবারের প্রবল আর্থিক অনটনে স্কুল, স্বপ্ন, সবই ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল দেবনাথ মণ্ডল। বাম সমর্থিত ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সাহায্যে ফের স্কুলে ভর্তি হল সে। স্কুলে ভর্তি হয়ে দেবনাথের প্রতিজ্ঞা, ভবিষ্যতেও শিক্ষক হবে এবং সবাইকে শিক্ষাদান করবে। সূত্রের খবর, রাজারহাট-নিউটাউন সমগ্র চত্বরজুড়ে এসএফআইয়ের উদ্যোগে একটি দল গঠন করা হয়েছে, যার নাম 'অ্যান্টি ড্রপ আউট স্কোয়াড' এই স্কোয়াডের মাধ্যমেই দেবু অর্থাৎ দেবনাথের খবর পায় তাঁরা। খবর পেয়েই শুরু হয় দেবুকে মুলস্রোতে ফেরানোর কাজ।এই দাদা-দিদিরাই ওকে স্কুলে ভর্তি করালেন:
এসএফআই সূত্রে খবর, কয়েকদিন ওই স্কোয়াডের সদস্যরা দেবুকে বোঝাতে শুরু করলে জানতে পারে, লকডাউনের আগে দেবু অর্থাৎ দেবনাথ চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ত। লকডাউনের পরে পড়াশোনা ছেড়ে দিলে কেউই ওর পাশে দাঁড়ায়নি। পাড়ায় কমবেশি ওকে বুদ্ধিমান ছেলে হিসেবে চিনলেও, অধিকাংশই এখন ওকে দিয়ে দোকান-বাজার করিয়ে নেয়। নিউটাউন গৌরাঙ্গনগরের বাসিন্দা দেবনাথের বাবা, নিতাই মণ্ডল পেশায় দিন মজুর। কোভিড পরিস্থিতিতে লকডাউনের জেরে আর্থিক অনটনের মুখে ছেলের পড়াশুনা বন্ধ রাখতে হয়েছিল বলে স্বীকার করেন তিনি।
রবিবার সিএন-ডিজিটালকে তিনি বলেন, 'অনেক ছোট বেলায় মা কে হারিয়ে দমে যায়নি দেবু, পড়াশুনা করে বড় হতে চেয়েছিল। কিন্তু কোভিড এসে সব শেষ করে দিয়েছিল।' তিনি রবিবার এসএফআই সদস্যদের ধন্যবাদ দেন এবং বলেন, 'ওরা বোধ হয় আমার ছেলেটার স্বপ্ন নষ্ট হতে দিল না।'স্কুলে দেবনাথ :
প্রথমদিনই দেবনাথ ওর স্বপ্নের কথা জানায় ওই দাদা-দিদিদের। পুনরায় স্কুলে ভর্তি করার আগে এসএফআইয়ের এক স্থানীয় কর্মী সুতপা মিস্ত্রি, বিনা পারিশ্রমিকেই ওকে পড়ানো শুরু করেন। শুরু হয় পুরোনো পড়া ঝালিয়ে নেওয়া। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নকে ফিরে পাওয়ার পর, দেবনাথের কাছের দিদিমণি হয়ে ওঠে সুতপা। রবিবার সুতপা সিএন-ডিজিটালকে জানায়, দেবনাথকে স্থানীয় যাত্রাগাছি প্রণবানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে, ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়েছে। নতুন করে পড়াশুনা শুরু করতে পেরে ওর ভালোই লাগছে।দিদিমনি সুতপার সঙ্গে দেবনাথ:
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)