১৬ মে, ২০২৪

Indian Idol: স্টেশনে রাত কাটিয়ে ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চ, ফার্স্ট রানার আপ বনগাঁর দেবস্মিতা
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-04-07 12:41:06   Share:   

বনগাঁয় জন্ম, বনগাঁয় বেড়ে ওঠা। ছোট থেকেই গানের প্রতি প্রবল আকর্ষণ। বাবার কাছে গানে হাতেখড়ি। তারপর গানের সুরে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া। গানে গানেই বেড়ে উঠেছেন দেবস্মিতা রায় (Deboshmita Roy)। পড়াশোনা করেছেন বনগাঁর কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। উচ্চশিক্ষা, দমদমের সরোজিনী নাইডু কলেজে। দিনে দুই থেকে তিন ঘন্টা রেওয়াজ করেছেন, এছাড়া যখনই ইচ্ছে হয়েছে সুর তুলেছেন গলায়। তাঁর বাবা একদিন এসে খবর দিলেন, 'ইন্ডিয়ান আইডলের (Indian Idol) অডিশন হবে দমদমে'। ২২ বছরের মেয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু।

বনগাঁ থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টার জার্নি করে পৌঁছন দমদমে। গিয়ে দেখেন, মাথা গোনা যাচ্ছে না অডিশন দিতে আসা গাইয়েদের। যেন রাজ্য ভেঙে পড়েছে ইন্ডিয়ান আইডলের অডিশনে। তবে নিজের উপর বিশ্বাস অটুট ছিল দেবস্মিতার। প্রায় ৮ থেকে ৯ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তবেই অডিশনের মূল কক্ষে প্রবেশ করার সুযোগ পান। প্রথম রাউন্ডে নির্বাচিত হন। তবে পরীক্ষা তখনও বাকি ছিল। কলকাতাতেই প্রায় ৪ রাউন্ড অডিশন হয় ইন্ডিয়ান আইডলের। তারপরেই ডাক পান মুম্বই থেকে।


হাওড়া স্টেশন থেকে মুম্বইয়ের ট্রেন। স্টেশনে পৌঁছে দেখতে পান ট্রেন নেই। স্টেশনেই অনিদ্রায় রাত কাটে দেবস্মিতার। পরদিন সকালে ট্রেন ধরে মুম্বই পৌঁছন। সেখানে আরও এক রাউন্ড অডিশনের পর গোল্ডেন মাইক পেয়ে ইন্ডিয়ান আইডলের মূল মঞ্চে পৌঁছন দেবস্মিতা। বাংলায় থেকেছেন এতদিন, হিন্দিভাষীর রাজ্যে কথা বলবেন কীভাবে বঙ্গসন্তান! তা নিয়ে জড়তা ছিল। তবে মুম্বই গিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই সেই জড়তা কাটিয়ে ওঠেন। এরপর তাঁর বাকি যাত্রা সকলের দেখা। মুম্বইয়ের নাম করা শিল্পীদের, সুরের আবেশে মুগ্ধ করেছেন বাংলার মেয়ে দেবস্মিতা।

দুই দিন ধরে চলে ইন্ডিয়ান আইডলের গ্র্যান্ড ফাইনাল। বিচারক আসনে বসেছিলেন পরিচালক জুটি আব্বাস ও মাস্তান। উপস্থিত ছিলেন সংগীত পরিচালক ও গায়ক সেলিম মার্চেন্ট। ছিলেন পরিচালক ও সংগীত শিল্পী বিশাল ভরদ্বাজ ও তাঁর সহধর্মিনী বিশিষ্ট গায়িকা রেখা ভরদ্বাজ। ফাইনালে উত্তীর্ন হওয়া বাকি সংগীতশিল্পীদের সঙ্গে গানে গানে জোর লড়াই চলে। নিজের সুরের জাদুতে ফার্স্ট রানার আপের ট্রফি ছিনিয়ে আনেন দেবস্মিতা।

মুম্বইতে ইন্ডিয়ান আইডলের রানার আপ হয়ে বর্তমানে ফিরে এসেছেন নিজের প্রাণের জায়গা বনগাঁয়। সিএন-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে দেবস্মিতা জানিয়েছেন, 'ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চ পর্যন্ত যাওয়া খুব কঠিন। একটি গান গাওয়ার প্রস্তুতির জন্য মাত্র এক বেলা সময় পাওয়া যায়। চ্যাম্পিয়ান হতে না পারার আক্ষেপ নেই। এত কঠিন লড়াইতে ফার্স্ট রানার আপ হয়েই খুশি।'


দেবস্মিতার এই গানের যাত্রায় সবচেয়ে বড় খুঁটি তাঁর মা-বাবা। ছোট বেলা থেকেই মেয়েকে সমর্থন করে এসেছেন, ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চেও মেয়ের পাশে থেকেছেন বাবা দেবপ্রসাদ রায় ও মা মিতা রায়। মেয়ের জয়ে গর্বিত তাঁরাও। দেবস্মিতার কথায়, 'দেশের অন্যতম জনপ্রিয় মঞ্চে গান গাওয়া সহজ হয়ে উঠেছিল আমার মা-বাবার আশীর্বাদে।' 

দেবস্মিতা আরও বড় স্বপ্ন দেখছেন। তাঁর ইচ্ছে, বনগাঁয় নিজের গানের স্কুল খুলবেন। নিজের অর্জিত বিদ্যা ছড়িয়ে দেবেন সকলের মধ্যে। প্লে ব্যাক সিঙ্গার হতে চান দেবস্মিতা। একইসঙ্গে স্বাধীন সুরকার হওয়ার স্বপ্নও দেখেন। মুম্বইতে থাকাকালীন বাংলার দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছেন দেবস্মিতা। তাঁর জয়ে গর্বিত বনগাঁর মানুষ। জাতীয় মঞ্চে বঙ্গ সন্তানের এই জয়, বাংলারও গর্ব।



Follow us on :