২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Kunal: কুণালের কটাক্ষের মুখে 'অরণ্যদেব গাঙ্গুলি', পরোক্ষে জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়কে আক্রমণ?
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2022-11-25 20:47:18   Share:   

অরণ্যদেব গাঙ্গুলি বলবেন আমার দল তুলে দিতে হবে, তাহলে আমি ওকে রসগোল্লা খাওয়াবো, দুটো হয় নাকি কখনও। শুক্রবার নাম না করে এভাবেই কি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Justice Abhijit Ganguly) বেনজির আক্রমণ করলেন তৃণমূল (TMC) মুখপাত্র কুণাল ঘোষ? এদিন তৃণমূলের মুখপাত্র (Kunal Ghosh) বলেন, 'আমি দলের একজন সামান্য মুখপাত্র। যদি আমার দল তুলে কেউ বলে, জানি না কে বলেছে। সবাই বলছে কেউ বলেছে, কেউ বলেছে, কেউ বলেছে। জানি না কে বলেছে, কেউ আর নাম বলে না। আমি ধরে নিচ্ছি অরণ্যদেব গাঙ্গুলি। অরণ্যদেব গাঙ্গুলি বলবেন আমার দল তুলে দিতে হবে, তাহলে আমি ওকে রসগোল্লা খাওয়াবো, দুটো হয় নাকি কখনও। কোর্টের উপর, সব বিচারকের উপর আস্থা আছে। কোর্ট আমাদের ভরসা, এরম নয় শুধু কেউ একজন পর্যবেক্ষণ মিডিয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে হিরো সাজার চেষ্টা করছেন। কাউকে আমি ব্যক্তিগত আক্রমণ করছি না।' 

এখানেই থামেননি কুণাল ঘোষ, তিনি আরও একধাপ এগিয়ে জানান, কেউ কেউ নাকি আকারে ইঙ্গিতে মুখপাত্র মুখপাত্র বলেন। তাহলে আমরাও বলছি বিচারব্যবস্থাকে সম্মান করি, কিন্তু অরণ্যদেব গাঙ্গুলি বলে কেউ যদি আমাদের দল তুলে কথা বলে, তাঁকে রসগোল্লা খাওয়াবো না। যা পারে করে নিক। 

কারও নাম না করেই পরোক্ষে কুণাল ঘোষ আরও বলেন, 'যদি কেউ ব্যক্তিগত উইশলিস্ট চরিতার্থ করতে গিয়ে তাঁর চেয়ারের অপব্যবহার করে, তাহলে সেটা চূড়ান্ত দুর্ভাগ্যজনক। একা কেউ করছেন না, গোটা বিচারব্যবস্থা, সব বিচারক, তাঁরা দিনরাত মানুষকে ন্যায়-বিচার দিচ্ছেন। কিন্তু যদি কেউ দেখাতে চান, আর কেউ বিচার করছে না, আর কোনও কোর্ট নেই, তিনি মঙ্গলগ্রহ থেকে এসে অরণ্যদেব সাজছেন, এটা ঠিক হচ্ছে না। এটা কী ভাষা! আমি দল তুলে দিতে বলবো, মামারবাড়ি নাকি এটা?' 


তাঁর দাবি, 'এই ভাষাগুলো শুনলে বোঝা যাবে যিনি বলছেন, তাঁর ভিতরটা কোন রাজনৈতিক রঙে রাঙানো। আমরা আদালতকে সম্মান করি, প্রত্যেক বিচারক-বিচারপতির প্রতি পূর্ণ সম্মান রয়েছে। কিন্তু আদালত যেটা ঠিক সেটার বিচার করবে, যেটা ভুল, সেই ভুল বলে দেবেন, অর্ডার দেবেন। তাঁরা তাঁদের নির্দেশ জানিয়ে দেবেন। তার বদলে যদি কোথাও কোথাও দেখা যায় যে কেউ কেউ উইশ লিস্ট পর্যবেক্ষণ-সংলাপের আকারে সংবাদ মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে ছড়ানোর চেষ্টা করছেন, তাহলে সেটা চরম দুর্ভাগ্যজনক। কোনও ব্যতিক্রম একজন যদি দেখাতে চান তিনি অরণ্যদেব হতে চাইছেন, তাহলে সেটা বিচারব্যবস্থার প্রতি চূড়ান্ত দুর্ভাগ্যজনক।'

এখন প্রশ্ন উঠছে কুণালে মন্তব্যে উঠে আসা 'বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা' এবং 'অরণ্যদেব গাঙ্গুলি' কি হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যদি কোনও নির্দিষ্ট কোর্ট বা বিচারপতির নাম এদিন একবারের জন্যও উল্লেখ করেননি তৃণমূল মুখপাত্র। কিন্তু শুক্রবার বেনামী আবেদনপত্র মামলার শুনানিতে শিক্ষা সচিবের এজলাসে উপস্থিতির মধ্যেই হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, 'বিধানসভার দলনেতা হন মুখ্যমন্ত্রী, আর লোকসভায় দলনেতা প্রধানমন্ত্রী। আমি ইলেকশন কমিশনকে বলব তৃণমূল কংগ্রেসের লোগো প্রত্যাহার করার জন্য, দল হিসাবে তাদের মান্যতা প্রত্যাহার করতে বলব নির্বাচন কমিশনকে। সংবিধান নিয়ে যা ইচ্ছা করা যায় না।'

তারপরেই নাম না করে তৃণমূলের মুখপাত্রর মুখে 'অরণ্যদেব গাঙ্গুলি বলবেন আমার দল তুলে দিতে হবে, তাহলে আমি ওকে রসগোল্লা খাওয়াবো, দুটো হয় নাকি কখনও' মন্তব্য ঘিরে চর্চা রাজ্য রাজনীতিতে। প্রশ্ন উঠছে কে এই অরণ্যদেব গাঙ্গুলি? কুণাল ঘোষ কি ঘুরিয়ে পরোক্ষে বেনজির আক্রমণ করে বসলেন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারব্যবস্থাকে?


তবে কুণাল ঘোষের এই মন্তব্যকে সমালোচনার সুরে বিঁধেছেন আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। তিনি বলেছেন, 'মানুষ কাদের বলে, যার মান আর হুঁশ দুটি আছে। কুণাল ঘোষের কোনওটাই নেই। একটা মানুষের পরিচয় হয় শিক্ষা এবং সংস্কৃতি দিয়ে। শিক্ষার প্রসঙ্গে এলে কুণালবাবু বোধহয় মাধ্যমিক পাশ। তবে পাশ না ফেল জানি না, ক্লাস টেন লেখা এফিডেভিটে। উনার সংস্কৃতি নিয়ে বললে সারদায় জেল খাটা আসামি, বাংলার পুলিস তাঁকে গ্রেফতার করেছে। এই ধরনের মানুষের থেকে কী মন্তব্য আশা করেন? কুণালবাবুর বোঝা উচিৎ কোথায় থামতে হবে। আমার মনে হয় কোর্ট এই বিষয়গুলো নোটিশে নিয়ে আদালত অবমাননার জন্য উনি জেলে যাবেন।' 

আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানান, 'কুণাল ঘোষকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিৎ এবং আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে কোর্টে তোলা উচিৎ। কোন সাহসে উনি এ কথা বলছেন! কুণাল ঘোষ বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে বিচারপতিকে হুমকি দিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই কাজ করেছেন।' অপর এক আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী জানান, এই বিচার প্রক্রিয়ার জন্য কুণাল ঘোষ বাইরে আছেন। উনি যে দল করেন সেই দল, সারাজীবন ওকে জেলে রাখতে চেয়েছিল।' 

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, 'আশা করবো এসব মুখপাত্রদের বিরুদ্ধে আইনের মধ্যে থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা নেবেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। যাতে অন্য কেউ সরকারি কাজে বা নিয়োগে হস্তক্ষেপ করার আগে পাঁচবার ভাববেন।' সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, 'বিচারপতির পর্যবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনও দল সরকারের নামে সংবিধান-বিরোধী কাজ করে, তাহলে সেই দলের সাংবিধানিক ভিত্তি, এমনকি প্রতীক প্রশ্নের মুখে পড়ে।' 


Follow us on :