ঝিঙের কিলো প্রতি দর দেড় টাকা, বরবটি ২ টাকা, কুঁদরি ২ টাকা। এতদূর শুনে খুশিতে ডগমগ হয়ে বাজারের থলে হাতে বেরিয়ে পড়লে নিশ্চিত আপনাকে ফিরতে হবে খালি হাতে। বাজারে আপনি ওই দরে কোনও সবজিই পাবেন না। অথচ জমিতে যাঁরা সবজি উৎপাদন করছেন, তাঁরা তা বিক্রি করছেন ওই জলের দরেই। চাষের খরচ ওঠা তো দুরঅস্ত, মাঠ থেকে সবজি তুলে বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচটুকুও উঠছে না। ফলে বাধ্য হয়ে বাঁকুড়ায় উৎপাদিত ফসল বাড়ির গোরুকে খাওয়াচ্ছেন চাষিরা। অনেক চাষি আর মাঠমুখো না হওয়ায় গাছেই নষ্ট হচ্ছে ঝিঙে, কুঁদরি, বরবটি, বেগুন।
মাসখানেক আগেও সবজির বাজারদর ছিল বেশ চড়া। গোড়ার দিকে ঝিঙে, কুঁদরি, বরবটি, করলা, বেগুন সহ অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন সবজির অল্পস্বল্প দামও পেয়েছিলেন চাষিরা। কিন্তু মে মাসের প্রথম সপ্তাহ যেতে না যেতেই দ্রুতহারে নামতে শুরু করে সবজির বাজারদর। পাল্লা দিয়ে নেমেছে সবজির পাইকারি দর। বর্তমানে আড়তে সবজি নিয়ে গেলে কার্যত জলের দরে তা আড়ৎদারকে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। চাষিদের দাবি, ঢ্যাঁড়স, বরবটি, ঝিঙে শুধুমাত্র মাঠ থেকে তুলে বাজার পর্যন্ত নিয়ে যেতে খরচ পড়ে কিলো প্রতি এক থেকে দেড় টাকা। আড়ৎদাররা ওই সবজিগুলির কিলো প্রতি এক থেকে দেড় টাকা দাম দেওয়ায় আর সে পথ মাড়াচ্ছেন না চাষিরা। সবজি চাষ করে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ায় ফসলের জমির দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না অধিকাংশ চাষি। ফলে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে হেক্টরের পর হেক্টর জমির সবজি গাছ। কেউ কেউ আবার আশায় আশায় মাঠে সবজি গাছ ঠিকঠাক রাখতে সবজি তুলে এনে গবাদি পশুকে খাইয়ে দিচ্ছেন।
মাঠে ও বাজারে সবজির দামের এই বিপুল ফারাক এবং চাষিদের দাম না পাওয়ার ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছে কৃষি বিপণন দফতর। দফতরের আধিকারিকরা এজন্য টাস্ক ফোর্সের নজরদারির অভাব মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে সবজির অত্যধিক উৎপাদন ও বাজারে চাহিদা না থাকার জন্যই এই পরিস্থিতি।