আনিস-কাণ্ডে প্রায় ৫ মাসের মাথায় উলুবেড়িয়া আদালতে চার্জশিট পেশ সিটের। সেই চার্জশিটে উল্লেখ "খুন হয়নি আনিস"। দুর্ঘটনাজনিত কারণেই পড়ে গিয়ে মৃত্যু। এমনটাই ফরেন্সিক রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ, চার্জশিটে দাবি করেছে সিটে। এমনকি, আমতা থানার তৎকালীন ওসি-সহ পাঁচ পুলিসকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিটে আইপিসির ১২০-বি-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজুর প্রসঙ্গ উল্লেখ রয়েছে। তবে চার্জশিটে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাখা হয়নি আইপিসির ৩০২ (খুনের) ধারা। বদলে গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ বা ৩০৪ ধারা দায়ের হয়েছে পাঁচ পুলিসকর্মীর বিরুদ্ধে। যদিও এই চার্জশিট মানছি না, দাবি আনিসের বাবা।
সিটের দায়ের করা চার্জশিটে নাম রয়েছে আমতা থানা ততকালীন ওসি দেবব্রত চক্রবর্তী-সহ এএসআই নির্মল দাস, হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা, সিভিক ভলেন্টিয়র প্রীতম ভট্টাচার্য ও সৌরভ কোনারের। সিটের চার্জশিটে বলা, সেই রাতে পুলিশের অভিযান ত্রুটিপূর্ণ। পুলিসি অভিযান বা রেইড চালানোর আগে জিডি করতে হয়। আনিসের বাড়িতে অভিযানের আগে সেই জিডি দায়ের হয়নি। এদিকে, কেন ওই রাতে আনিসের বাড়িতে অভিযানে গিয়েছিল পুলিস?
চার্জশিটে উল্লেখ, কর্ণাটকে হিজাব-কাণ্ডের সময় আনিসের বেশকিছু ফেসবুক পোস্ট নজরে আসে হাওড়া গ্রামীণ পুলিসের মনিটরিং সেলের। সেই সব পোস্ট থেকে অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয় তাদের। সেগুলির বিরুদ্ধে বাগনান ও আমতা থানায় মামলা দায়েরও হয়। ওই পোস্টগুলির মধ্যে একটি আনিসের প্রোফাইল থেকে করা হয়েছিল। তদন্তে এমনটাই জানতে পেরেছেন সিট আধিকারিকরা। ১৮-ই ফেব্রুয়ারি করা হয়েছিল ওই পোস্ট।
তদন্তে জানা গিয়েছিল, আনিসের দাদা ওই মোবাইলটি ব্যবহার করেন, যে মোবাইল থেকে বিতর্কিত পোস্টটি করা হয়েছিল। ঠিক কী ঘটেছিল সেই রাতে?
সিটের চার্জশিটে উল্লেখ, ২ অফিসার-সহ ৯ জন পুলিস আনিসের বাড়িতে রেইডে যান। আমতা থানার জিডিতে সেবিষয়ে কোনও কিছুই উল্লেখ ছিল না। ৩ জন পুলিশকর্মী আশপাশের বাড়িতে পজিশন নিয়েছিল। একজন পুলিশকর্মী আনিসের বাড়ির পিছনে পজিশনে ছিল। আনিস কোথায় জানতে চেয়ে ২ পুলিসকর্মী প্রীতম এবং কাশীনাথ বাড়ির ভিতরে ঢোকেন। সেই মুহূর্তেই উপর থেকে ভারী কিছু পড়ার শব্দ হয়। পুলিস-সহ অন্যরা রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে আনিসকে। এরপরেই পুলিস ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
এই চার্জশিট প্রসঙ্গে আনিসের বাবার বক্তব্য, 'চার্জশিটে ৩০২ ধারা নেই। তাহলে আমার ছেলে নিজের ইচ্ছায় খুন হয়েছে। সেই রাতে আমাকে বন্দুক ঠেকিয়ে ছেলেকে উপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এদিকে ৫ জন পুলিসকর্মীর মধ্যে দুই জনকে গ্রেফতার করা হল, বাকি তিন জন কোথায় গেল? সিটের এই চার্জশিটে আমার ভরসা, আশা নেই। কোর্টের কাছে আবেদন সিবিআই তদন্ত হোক। কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত না করলে এই খুনে আমি ন্যায় পাব না।'