ব্রেকিং নিউজ
shaoli : নাট্যপ্রতিভা শাঁওলী বিদায়ে একটা যুগের শেষ
Homestate shaoli : নাট্যপ্রতিভা শাঁওলী বিদায়ে একটা যুগের শেষ
Post By : সিএন ওয়েবডেস্ক
Posted on :2022-01-17 11:30:49
নাথবতী অনাথবৎ নাটক ভারতীয় সংস্কৃতির উপর এক মস্ত প্রতিবাদ । একই সাথে মহাভারতের চরিত্র নিয়ে শাঁওলী যেভাবে প্রয়োগ করলেন তাতে ভারত তথা বিশ্ব নাট্যমহলে বিরাট আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলো ৮০ র দশকে । শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্র পরিবারের শেষ প্রতিভার বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি যুগের শেষ হলো।
মিত্র পরিবারই ছিল নাট্য মহলের প্রাণকেন্দ্র | স্বাধীনতা উত্তর যুগে যখন পুরোদস্তুর বাম আন্দোলন চলেছিল তখন শম্ভু মিত্র তারই সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বা নেতৃত্বে ছিলেন বামেদের সাংস্কৃতিক সংগঠন আইপিটিএ বা ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সাথে । পরে শম্ভুবাবু বেরিয়ে আসেন সিপিআই সংগঠন থেকে কারণ তিনি মনে করেছিলেন জহরলাল নেহেরুর বিরুদ্ধে অহেতুক প্ররোচনামূলক নাটক চলেছে । গড়লেন 'বহুরূপী' নাট্যদল ,সাথে স্ত্রী তৃপ্তি মিত্র ও একঝাঁক প্রতিভাবান নাট্যকর্মীকে । ওই সময়ে শাঁওলী খুবই ছোট । কিন্তু কাছের থেকে নাট্য জগৎকে দেখেছিলেন । পরবর্তী সময়ে তিনিও বহুরূপীতে যোগ দেন । রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের উপর প্রবল আবেগ ছিল শম্ভুবাবুর। ডাকঘর ইত্যাদি নাটকের সঙ্গে যুক্ত হন শাঁওলী । শিক্ষা শেষে পুরোদস্তুর নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি । একটা সময়ে শম্ভুবাবু দেখলেন তাঁর দলেই অনেকে বাম সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করছে , বিরক্ত হয়ে তিনি নিজের হাতে গড়া বহুরূপী ছেড়ে দিলেন সঙ্গে শাঁওলী । তখন স্ত্রী তৃপ্তির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ে।
এবারে ধীরে ধীরে ফের আলাদা দোল গড়লেন শাঁওলী 'পঞ্চম বৈদিক' । ফের একঝাঁক নতুন ছেলেমেয়ে যোগ দিলো দলে । তৈরি হলো নাটক 'নাথবতী অনাথবৎ' । একক অভিনয়ে মহাভারতের দ্রৌপদীর ভূমিকায় । সাধারণ ড্রেস ও মেকআপ । একাই আড়াই ঘন্টা দাপটে অভিনয় করলেন । যেন গল্প বলছেন যে , রাজ্য পেতে কৌরব ও পাণ্ডবের মধ্যে পাশা খেলা যেখানে পঞ্চ স্বামী স্ত্রী দ্রৌপদীকে বাজি রেখে জুয়া খেলছে । নির্মম ভাবে মহাভারতের চরিত্রদের মুখোশ খুলে এক নারী বিপ্লবের আবেগ তৈরি করেছিলেন । বাবার মতো বামপন্থী হলেও বামফ্রন্টের ঘোর বিরোধী ছিলেন । সিনেমা করেছিলেন হৃত্বিক ঘটকের 'যুক্তি তর্ক গপ্পো' যা প্রকারান্তে নক্সাল আন্দোলনের সমর্থন ছিল।
পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন । ২০০৯ এ মমতা কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী হলে শাঁওলীকে একটি বিশেষ সরকারি দায়িত্ব দেন । ২০১১ তে বাংলায় তৃণমূল ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বাংলা একাডেমির প্রধান করেন । এই সময়ে অনেকটাই নাটক থেকে বেরিয়ে আসেন শাঁওলী । সম্প্রতি প্রবল জ্বরে ভুগছিলেন । তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করলে তিনি আপত্তি করেন । তাঁর কন্যাসম অর্পিতা ঘোষ দুবারের লোকসভার সদস্য ছিলেন । রবিবার বিকেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন । বয়স বলেছিলো ৭৪ । তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বাবার মতোই নির্দেশ ছিল যেন তাঁকে নিঃশব্দে শ্মশানে নিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয় । পরে মৃত্যুর খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেন । শেষ পর্যন্ত তিনি প্রমান করলেন যে যথার্থই তিন অনাথবৎ ছিলেন।