জলজ্যান্ত বেঁচে রয়েছেন। হাতে রয়েছে বৈধ ডিজিটাল রেশন কার্ডও। কিন্তু কারোর নাম বাদ পড়েছে গ্রাহক তালিকা থেকে। আবার কোনও গ্রাহকের রেশন কার্ড ব্লক করা রয়েছে। ফলে রেশন দোকানে গিয়ে খালি ব্যাগ নিয়েই ফিরতে হচ্ছে অনেককে। বাঁকুড়া শহরের একটি রেশন দোকানেই এমন গ্রাহকের সংখ্যা ৫০।
ওই এলাকার একটি ছোট ঘটনা বললে স্পষ্ট হবে এই রেশন সকলের কতটা প্রয়োজন। আরতী বাগদী। বয়স সত্তর ছুঁয়েছে। কিন্তু পেট মানে না বয়সের ভার। অগত্যা অশক্ত শরীরেই সকাল হলেই বেরোতে হয় শহরের রাস্তায় রাস্তায়। বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন পাড়ায় ঘুরে ঘুরে অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে যে সামান্য খাবার জোটে দুপুর কাটে তা দিয়েই। রাতের খাবার কোনওদিন জোটে আবার কোনওদিন জোটে না।
বিবেকের টানে মাঝেমধ্যে নিজের মুখের গ্রাস তুলে দেন পাশের বাড়িতে থাকা মৃত নাতির ছোট ছোট অনাথ ছেলেমেয়েগুলোর অভুক্ত মুখে। রেশনের সামান্য চাল, গম অভাবের সংসারে ছিল একটু বাড়তি অক্সিজেন। কিন্তু এমাস থেকে তাও বন্ধ। রেশন দোকানে গিয়ে ফিরতে হয়েছে খালি ব্যাগ হাতে। স্থানীয় রেশন ডিলার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন রেশন দোকানের গ্রাহক তালিকায় আরতী দেবীর নামে পড়েছে লাল কালির দাগ। এই অবস্থায় রেশন দেওয়া সম্ভব নয়। সত্তর পেরোনো আরতী দেবীর অভাবের সংসারে যে রেশন কয়েকটা দিনের খাবার জোটাতো সেই রেশন আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তাঁর কাছে শুধুই সম্বল চোখের জল।
রেশন ডিলারের যুক্তি মানেনি খাদ্য সরবরাহ দফতর। দফতরের দাবি ওই গ্রাহকরা রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড সংযুক্ত না করার ফলেই এমন ঘটনা ঘটেছে। রেশন ডিলারদের এই সংযুক্তিকরণের জন্য সমস্ত যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে। তারপরও ডিলারদের গড়িমসি ও টেকনিক্যাল জ্ঞানের অভাবে এমন ঘটনা ঘটছে।