সামনেই টুসু পরব, অপেক্ষায় পুরুলিয়া। ছৌ-নাচ, লালমাটি, জঙ্গল ঘেরা পাহাড় আর বসন্তের লাল পলাশে রাঙা একের পর এক নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্যের বাইরে পুরুলিয়ার অন্যতম পরিচিতি টুসু পরবে৷ রঙিন রঙিন কাগজ ও পাটকাঠি দিয়ে নির্মিত চৌদলে ঝলমলে হয়ে ওঠে পুরুলিয়া জেলা।
লোক উৎসব টুসু পরব অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিনে শুরু হয়, আর শেষ হয় পৌষ সংক্রান্তি বা মকর-সংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে। টুসু এক কুমারী কন্যা। এর পুজোও করেন কুমারী কন্যারা। নেই কোনও মন্ত্র, নেই নির্ধারিত ক্রিয়াকর্ম। তাই প্রয়োজন হয় না ব্রাক্ষ্মণেরও। গ্রামের মেয়েরাই নিজেদের সাজানো রঙিন কাগজের চৌদলের উপর প্রতিষ্ঠা করেন পোড়ামাটির টুসুর মূর্তি। পিটুলি গোলা দিয়ে দেওয়া হয় আলপনা। মাটির সরার চারপাশে জ্বলে মাটির প্রদীপ। সরার ভিতর থাকে নতুন ধান, তুষ মেশানো নাড়ু, গোবরের দলা।মেয়েরা এর সামনে বসে একের পর এক গান বাঁধেন। কখনও একক, আবার কখনও সম্মিলিতভাবে লালমাটির গ্রামগুলি মুখরিত হয়ে ওঠে টুসু গানে। আসলে ধর্মীয় রীতির উর্দ্ধে উঠে এ যেন এক হৃদয়ের উৎসব। টুসু নামের কোনও দেবী নেই আমাদের তথাকথিত শহুরে সমাজে। টুসু অবৈদিক, অপৌরাণিক, অব্রাহ্মণ উৎসব। তাই বোধহয় এর স্থান নেই পাঁজিতে। এই পুজোর নির্ঘন্টও দেওয়া নেই কোথাও।
লোকসংস্কৃতির পীঠস্থান পুরুলিয়া জেলা। আধুনিকতার যাঁতাকলে পুরুলিয়াবাসী আজ নিজেদের ঐতিহ্যবাহী উৎসবের প্রতি উৎসাহ হারাচ্ছে, চর্চার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে টুসু পরবকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া লোকগীতিগুলো। তাই এলাকার মানুষকে নিজেদের ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট করে টুসু পরব পালনে উৎসাহিত করতে টুসুর চৌদল বিতরণ করলেন রঘুনাথপুর শহর কংগ্রেস সভাপতি তারক পরামানিক।
মূলত, টুসু ঘরের উৎসব, যুবক-যুবতীদের প্রেম নিবেদনের সময় এই টুসু পরব। শিলাই, কাঁসাই ও সুবর্ণরেখা ঘাটগুলোয় মেলা বসে। মেলা ঘিরে থাকে উন্মাদনা। রাঢ় বাংলার এক বিরাট অংশের মানুষের মন জুড়ে এই উৎসব। টুসু গানের মূল উপজীব্য গ্রামবাংলার সহজ, সরল জীবনের গল্প, আশা, নিরাশা, রঙ্গ তামাশার কথা। টুসু গান প্রান্তিক মানুষের জীবনকথা। তাই এভাবেই বেঁচে থাকুক টুসু পরব। টুসু গানে জমে উঠুক পৌষের সন্ধ্যা।