এই সময়টার জন্যই সারা বছর অপেক্ষায় থাকে হুজুগে বাঙালি। শুধু বাঙালিই বা বলি কেন, শীতের আমেজ চেটেপুটে উপভোগ করতে সবাই আজ বারমুখী। ভিলেন করোনার কারণে দু বছরের বন্দিদশা কাটিয়ে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে জীবন। আর সেই আনন্দ থেকে নিজেদের বাদ দিতে কি আজ মন চায় ? তাইতো শীতের নরম রোদ গায়ে মেখে চলছে দেদার হুল্লোড়, মজা।
কেউ গেছেন বনভোজনে, কেউবা মেলায়, কেউ আবার সপরিবারে বা বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরছেন নানা পর্যটনস্থল। আর ঘোরা হবে, ভুরিভোজ হবে না, তা আবার হয় নাকি?
সেই আয়োজনও থাকছে কোথাও কোথাও। এই যেমন জমে উঠেছে জলপাইগুড়ির খাদ্য উৎসব।
রসনা তৃপ্তিতে যদি মেলে ধোঁয়া ওঠা বিরিয়ানি, মুচমুচে মাশরুম পকোড়া, সঙ্গে মিষ্টিমুখের জন্য রকমারি পিঠে, পুলি, গাজরের হালুয়া, তাহলে মন্দ কি?
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে রবিবার পর্যন্ত। এই মেলার প্রধান বৈশিষ্ট্য, কোনও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই গত ছয় বছর ধরে মেলার আয়োজন করছেন জলপাইগুড়ি পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা বর্তমানে কো অর্ডিনেটর লোপামুদ্রা অধিকারী।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর মহিলাদের নিয়ে বহু স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করেছিলেন তিনি। শুধু গোষ্ঠী তৈরি করেই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি। মহিলাদের স্বনির্ভর করে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছেন। সেই ভাবনা থেকেই ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় খাদ্য-উৎসব। প্রথম বছর ১২টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিয়ে তিনি উৎসব শুরু করেছিলেন। ২০২১ -এ ষষ্ঠতম বছরে পা দিয়ে খাদ্য উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে ওই ওয়ার্ডের ২৩টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী।
১৯ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ক্লাব ময়দানে উৎসবের সূচনা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহিলাদের স্বনির্ভর করার এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন তৃণমুল জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপ, জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারপার্সন পাপিয়া পাল।
প্রথম দিন থেকেই রসনাতৃপ্তির আশায় ভিড় জমছে এখানে। মহিলাদের হাতে তৈরি জিভে জল আনা রকমারি খাবার আকর্ষণ করছে আট থেকে আশি সকলকেই। গত বছর করোনার জন্য খাদ্য-উৎসব বন্ধ ছিল। তার আগে ২০১৯ সালে চারদিনের উৎসবে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার ব্যবসা করেছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি। এই বছর সেই অঙ্কও ছাড়িয়ে যাবে বলেই আশা তাদের। উৎসবে খাবারের স্টল দেওয়া স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা জানিয়েছেন, এই মেলার মধ্য দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন যেমন পূর্ণ হয়েছে, তেমনি আরও বড় কিছু করার আত্মবিশ্বাসও তৈরি হয়েছে।