বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বণ। তার মধ্যে অন্যতম পৌষ পার্বণ। শীতের মরসুমের এই পৌষ পার্বণের অপেক্ষায় সারা বছর থাকে রাজ্যবাসী। শীত বড় ক্ষণস্থায়ী এ বঙ্গে। সেই ঠান্ডাকে উপভোগ করতে কোনও খামতি রাখতে চায় না আম বাঙালি। তাই করোনা আবহে খানিক বেগ পেলেও ঐতিহ্য বজায় রেখে পৌষ পার্বণ পালন রাজ্যের নানা প্রান্তে।
আমন ধান, চাল, ঢেঁকি, চালগুঁড়ি, পিঠেপুলি হচ্ছে পৌষপার্বণের অনুষঙ্গ। মেশিন নয়, ঐতিহ্য বজায় রেখে আজও ঢেঁকিছাঁটা চালেই পৌষপার্বণ পালন করে শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমানের একাধিক গ্রাম। পৌষ সংক্রান্তির দিন সেই ঢেঁকিছাঁটা চালেই গ্রাম বাংলার মহিলাদের হাতের শৈলীতে তৈরি হয় নানা ধরনের পিঠে। পাতে পড়ে ভাপা পিঠে, চিতই পিঠে, পাটিসাপটা, আসকে পিঠে, পুলিপিঠে, গুড়পিঠে। মেশিনের থেকে ঢেঁকি ছাঁটা চালের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি এইসব পিঠের জুড়ি মেলা ভার বলেই দাবি খাদ্যরসিকদের।
প্রচলিত কথা অনুযায়ী ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে’। কিন্তু বর্তমানে জেট গতির যুগে ঢেঁকি এখন একপ্রকার ইতিহাস। মেশিনের যুগে কদর কমেছে ঢেঁকির। তবুও এই রাজ্যের গ্রাম বাংলার কিছু মানুষ এখনও আগলে রেখেছেন সাবেকি ঢেঁকিকে। আর তাই পৌষমাস শুরু হতেই পিঠে-পুলির চাল কোটার জন্য রাজ্যের গ্রাম বাংলায় বাড়ে ঢেঁকির কদর। যেমনটা দেখা গেল রাজ্যের শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম শিয়ালী ও কোড়ায়।
পৌষ সংক্রান্তির লগ্নে গ্রামের মহিলারা ব্যস্ত ঢেঁকিতে চাল কোটার কাজে। গ্রামের বাড়ি বাড়ি কান পাতলেই ভেসে আসছে ঢেঁকিতে চাল কোটার শব্দ। এক সময় পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে গ্রাম বাংলার মহিলারা ঘরে ঘরে ঢেঁকিতে চাল কোটা শুরু করে দিতেন। ঢেঁকিতে ভাঙা চাল গুঁড়িয়ে তা দিয়েই তাঁরা তৈরি করতেন হরেক রকমের পিঠে-পুলি। কিন্তু মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ঢেঁকি এখন যেন মিউজিয়ামে জায়গা করে নিতে চলেছে। ঢেঁকি ছেড়ে গ্রাম বাংলার বহু মানুষ পৌঁছে যাচ্ছেন মিলে। তবে তারই মধ্যে কিছু কিছু গ্রামের মানুষ এখন ঐতিহ্য বজায় রেখে বাড়ির সাবেকি ঢেঁকিকে আগলে রেখেছেন। যেমনটা আগলে রেখেছেন শিয়ালী ও কোড়া গ্রামের মানুষজন। তাঁরা চান না গম ভাঙানোর মেশিনে পিঠে-পুলির চালের গুঁড়ি তৈরি করতে।