প্রতিনিয়ত চলছে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার। কেউ কখনও কাদায় পা পিছলে পড়ছে। আবার কেউ পড়ে হাত-পা ভাঙছে। কারও মাথায় লাগছে চোট। তাও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জীবিকা অর্জনের আশায় ছুটে চলেছেন নদীর ওপারে।
দক্ষিণ সুন্দরবনের কাকদ্বীপ ব্লকের মধুসূদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম রামতনুনগর । প্রতিদিন এই পঞ্চায়েতের দু নম্বর আইলার বাঁধের উপর দিয়ে অবাধে চলছে যাত্রী পারাপার। চারটি ভুটভুটি কয়েক হাজার মানুষ নিয়ে আসে, পৌঁছে যায় নয়াচরে। যেখানে চলে মাছের ব্যবসা। আর সেই ব্যবসাই তাঁদের পেশা। মরণ-ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও নিরুপায় গ্রামবাসীরা।
পঞ্চায়েত, জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েও মেলেনি কোনও সুরাহা। বারবার আশ্বাস দিয়েও এখনও অবধি মেরামত করা হয়নি জেটিঘাট। শীত হোক কিংবা বর্ষা, এভাবেই করতে হচ্ছে যাতায়াত। স্থায়ী ঘাটের আশায় মুখিয়ে রয়েছেন গ্রামবাসীরা। অথচ নয়াচরে যাওয়ার ভাড়া ৭০ টাকা মাথাপিছু । আসার ভাড়াও ৭০ টাকা। এর ওপর রয়েছে অতিরিক্ত মালের ভাড়া । গরু, মহিষ, ভেড়া নিয়ে কেউ গেলে তার ভাড়া আলাদা আলাদা। জানা গেছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের ডাক নেই এই ফেরিঘাটে। নেই মধুসূদনপুর পঞ্চায়েতের ডাক। ফলে সরকার পাচ্ছে না কোনও মুনাফা। তবে এই টাকা কারা আত্মসাৎ করছে? উঠছে প্রশ্ন।
এক যাত্রী তীব্র ক্ষোভের সুরে বলেন, "মৃত্যুকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হচ্ছে। পঞ্চায়েতের দোরগড়ায় অনেকবার গিয়েছি। তাতেও কোনও সমাধান পাইনি। প্রতিদিন মা-বোনেরা এভাবে ইজ্জত হাতে নিয়ে পারাপার করছে। কখন পা পিছলে পড়ছে। জামাকাপড়ে কাদা লেগে যাচ্ছে। আর তা নিয়েই চলছে জীবনকে বাজি রেখে যাতায়াত।"
এক মহিলা যাত্রী জানান," খুবই সমস্যা হচ্ছে। একটা জেটি-ঘাট করে দিলে এই অসুবিধাটা হত না। ছোট বাচ্চাকে নিয়ে রোজ যাতায়াত করতে হয়। খুব ভয়ে ভয়ে পারাপার করি। যদি পড়ে যায়। বাড়িতে রেখে গেলে বাচ্চারা খাবে কী? প্রশাসন আমাদের কথা একটু ভাবুক।"
বারবার শোনা যায় নৌকাডুবির কথা। এক সঙ্গে শয়ে শয়ে লোক ভুটভুটিতে উঠছে। সামান্য ঝড় বা জোয়ারের তীব্রতায় ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা সর্বদা রয়েছে। এই কথা জানা সত্ত্বেও গ্রামবাসীরা করে চলেছেন যাতায়াত। এছাড়া তাদের আর উপায় কী?