গঙ্গাসাগরে তিনদিনের সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দ্বিতীয় দিনে ফের মুড়িগঙ্গা নদীর উপর ব্রিজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি।
মুড়িগঙ্গা নদীর উপর চর নিয়ে সমস্যা রয়েছে। যাতায়াতের আজও সমাধানসূত্র মেলেনি বলে অভিযোগ। মাস দেড়েক হল মুড়িগঙ্গা নদীতে শুরু হয়েছে ড্রেজিং। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগ কমার লক্ষ্মণ নেই। এখনও ভাটার সময়ে নদী পেরোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সামনেই গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যেই তীর্থযাত্রীদের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। নদী পেরোতে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরাও। এবার নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছিল ড্রেজিং। প্রশাসনের দাবি, পাঁচটি আধুনিক মেশিন দিয়ে জোরকদমে কাজ চলছে। মেলার কাজ আগে শেষ হবে। তবে নিত্যযাত্রীদের একাংশ জানান, এতদিন ধরে ড্রেজিং চললেও তার ফল চোখে পড়ছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীপাড়ে বসে থাকতে হয়।
গঙ্গাসাগরে যেতে গেলে দুদিক দিয়ে পেরোতে হয়। লট নম্বর আট থেকে কচুবেড়িয়া। অন্যদিকে নামখানা থেকে বেনুবন। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী পার হয় লট নম্বর ৮ থেকে কচুবেড়িয়া ভেসেলে করে। আগে ছিল ডিঙি নৌকা। ১৯৯০ সালে প্রথম ভেসেল পরিষেবা চালু হয়। তারপর থেকে চলছে ভেসেল পরিষেবা এক নম্বর স্থায়ীঘাট থেকে। যাত্রী সংখ্যা বাড়ায় ২০১৫ সালে ৪ নম্বর স্থায়ী ঘাট চালু করে সরকার। কিন্তু নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় শুরু হয়েছে যাতায়াত সমস্যা। ঘন্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় যাত্রীদের। জোয়ার এলে তবেই মেলে পরিষেবা। সাগরে বিদ্যুৎ যাওয়াতে ইলেকট্রিক পোস্ট বসে নদীতে।
৪ নম্বরে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে চর জেগে ওঠায় পারাপারে আরও সমস্যা হয়। প্রতিবছর গঙ্গাসাগর মেলায় কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে চর কাটানো হয়। কিন্তু দু-তিন মাস পর ফের সেই একই সমস্যার সৃষ্টি। ২০১৮ সালে ঠিক হয়, সেচ দফতরের কয়েকশো কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিদিন হবে ড্রেজিং। কিন্তু চলতি বছরে দুটি স্থায়ী ঘাট ও গঙ্গাসাগরের জন্য তিনটি অস্থায়ী ঘাটের ড্রেজিং শুরু হলেও আজও সমাধান হয়নি সমস্যার। স্থানীয়দের দাবি ব্রিজ হলে মিলবে সমাধান।
মুড়িগঙ্গার উপর ব্রিজ নিয়ে শুরু রাজনৈতিক তরজা। অভিযোগ, ২০০৭ সালে রাজ্য বাম, কেন্দ্রে কংগ্রেস শাসন। সেই সময় রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জাহাজমন্ত্রী মুকুল রায় ব্রিজ করতে বাধা দেন। তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ও স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ব্রিজের ডিপিআর রাখেন। মোট খরচ বরাদ্দ হয় ৬০৩ কোটি টাকা। নতুন রাস্তা পশ্চিম গঙ্গাধরপুর হয়ে ভায়া ময়নাপাড়া থেকে ব্রিজ শুরু হয়ে যাবে মুড়িগঙ্গা হয়ে কচুবেড়িয়া পর্যন্ত।
এবার ক্ষমতায় এসে ব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়াতে শুরু হয়েছে জল্পনা। গঙ্গাসাগর মেলা ঘিরে যে ড্রেজিং হয়, তার দায়িত্বে সেচ দফতর থাকলেও বালি বিক্রি করত কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতি। অভিযোগ, মন্টুরাম পাখিরা সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী থাকাকালীন রাজস্ব না দিয়ে এই বালি বিক্রি হত। তখন থেকে আজও চলে আসছে এই বালি বিক্রির কাজ। কিন্তু বর্তমান সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা হওয়ায় বালি নিয়ে শুরু হয় ঠাণ্ডা লড়াই। একদিকে সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী, অন্যদিকে কাকদ্বীপ বিধায়ক গোষ্ঠী। যার ফলে ড্রেজিং বন্ধ থাকে।
বিরোধীদের দাবি, প্রতিশ্রুতি সার। মুখ্যমন্ত্রী ব্রিজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা হবে না। নিজেদের কোন্দল ঢাকতে তিনি এই পরিকল্পনা করেছেন। সাধারণ মানুষের দাবি, আর হয়রানি নয়। এবার চাই যাতায়াতের সুব্যবস্থা।