মেয়াদ শেষের ছ-মাস আগেই দুর্গাপুর পুর নিগমের মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দিলীপ অগস্তি। মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে ২৪ ডিসেম্বর জরুরি বৈঠকের মাধ্যমে দুর্গাপুর নগর নিগমের আগামী মেয়র নির্বাচন করার কথা ঘোষণা করেন দুর্গাপুর নগর নিগমের কমিশনার ময়ূরী ধাস।
২০১৭ সালে দুর্গাপুর নগর নিগম নির্বাচনে তৃণমূল জয় পায়। অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে মেয়রের পদে আসীন হন দিলীপ অগস্তি। নগর নিগমের ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হন রাজ্য সরকারের প্রাক্তন এই আমলা।
মঙ্গলবার আসানসোলে দুর্গাপুরের কাউন্সিলরদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বিধান উপাধ্যায়। মেয়র হিসেবে কাকে নির্বাচিত করা হবে, সেই বিষয়ে ৪২ জন কাউন্সিলারের মতামত নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, নগর নিগমে ৪৩ টি ওয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে শুভেন্দু অধিকারী অনুগামী বলে পরিচিত ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দেন। ছ মাস পর দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচন। এরই মধ্যে শহরের মহানাগরিকের পদত্যাগের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ২০১৭ সালে রক্তাক্ত হয়েছিল দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচন। ভোট লুটের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পদত্যাগী মেয়র দিলীপ অগস্তির পাশে দাঁড়িয়ে দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই বলেন, দুর্নীতিকে রুখে দিয়েছিলেন দিলীপ অগস্তি। এতে স্বার্থে অনেকের ঘা লাগতে পারে। তাই তাঁকে পরিকল্পনামাফিক সরিয়ে দেওয়া হল। তবে সামনের পুর নির্বাচনে এত কিছু করেও তৃণমূল শেষ রক্ষা করতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই।
সুর চড়িয়ে সিপিআইএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের অভিযোগ, কোনওভাবেই তৃণমূল এবার তার গড় রক্ষা করতে পারবে না। চলতি মাসের ২২ তারিখ দুর্গাপুর নগর নিগমের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভে বসছে সিপিআইএম। ব্যর্থ এই পুরসভাকে মানুষ দেখে নিয়েছে, তাই মেয়র পরিবর্তন করে শেষ রক্ষা আর করতে পারবে না শাসকদল। এমনই দাবি জেলা সিপিআইএম নেতৃত্বের।
এই ইস্যুতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়াল কংগ্রেসও। জেলা কংগ্রেস সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী জানান, মেয়র বদলে ফেলাটা হল শাসকদলের কৌশলী চাল। আর যে চাল মানুষ ধরে ফেলেছে। শুধু বিরোধীরা নয়, দুর্গাপুর নগর নিগমের মেয়র দিলীপ অগস্তিকে নিয়ে ঘরের অন্দরেই দ্বন্দ্ব ছিল তৃণমূলের। গত বছর দুর্গাপুর ব্যারাজের লকগেট ভেঙে বিপত্তি বেধেছিল। আর ঠিক সেই সময় তৎকালীন পুর ও নগরন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে পাশে বসিয়ে কলকাতা থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুরের মেয়রকে গুড ফর নাথিং বলেছিলেন। তিনি ভালো মানুষ হতে পারেন, কিন্তু ভালো কাজ করতে না পারলে তাঁকে পদে রেখে কোনও লাভ নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর থেকেই মাঝে মাঝেই দুর্গাপুরের মহানাগরিককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে রটনা চলত। সেই জল্পনার যবনিকা পড়ল সোমবার বিকেলে। জেলাশাসকের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন শহরের মহানাগরিক দিলীপ অগস্তি।
সূত্রের খবর, হয়তো দুর্গাপুরের প্রাক্তন মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী নগর নিগমের বর্তমান ডেপুটি মেয়র অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়কে মেয়র হিসেবে প্রজেক্ট করবে দল। ২৪ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে সেই নামই ঘোষণা করতে পারে তৃণমূল। সব মিলিয়ে মেয়াদ শেষের আগে দুর্গাপুরের মেয়রের পদত্যাগকে ঘিরে শিল্পাঞ্চল জুড়ে জোর রাজনৈতিক জল্পনা তৈরি হয়েছে।