বছরের প্রথমদিন জলপাইগুড়ি জেলার জন্মদিন। ১৫৩ তম জন্মদিন জল-সবুজ ঘেরা এই জেলার। ১৮৬৯ সালের ১ লা জানুয়ারি জলপাইগুড়ি জেলার জন্ম। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকের হাত ধরেই জন্ম এই জেলার। সেই সময়ের সরকারি নথিতে তেমনই উল্লেখ রয়েছে।
তবে তার আগে অধুনা বাংলাদেশের রংপুর জেলার একটি মহকুমা শহর হিসেবে পরিচিতি ছিল এই জলপাইগুড়ি। কিন্তু ১৮৬৮ সালে ইন্দো-ভূটান যুদ্ধের পর প্রশাসনিক কাজ এবং সামরিক সুবিধার কথা মাথায় রেখেই এই স্থানকে একটি স্বতন্ত্র জেলার মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। জলপাইগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট দুই ঐতিহাসিক এবং প্রাবন্ধিক উমেশ শর্মা এবং আনন্দগোপাল ঘোষের কথায় উঠে এল সেই সময়ের কিছু খণ্ড চিত্র।
আজ অর্থাৎ শনিবার দেড়শো বছর পার করার পর দেখা যায়, পুরানো গৌরব এখন অপহৃত এই প্রাচীন জেলার। একদিকে বঞ্চনা, আর অন্যদিকে অঙ্গছেদ কোণঠাসা করে রেখেছে চারটি জেলার বিভাগীয় শহর জলপাইগুড়িকে। আগে ব্রিটিশ আধিপত্যের পাশাপাশি বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির শাসন ও প্রতিপত্তি চলত এই স্থানে। সেই ঐতিহ্যবাহী সময়ের সঙ্গে এখন তা ম্লান। আলিপুরদুয়ারকে বিভক্ত করে আলাদা জেলা করা হয়েছে। আগে উত্তরবঙ্গের একমাত্র বিভাগীয় জেলা ছিল জলপাইগুড়ি। এখন তা দুভাগে বিভক্ত। বর্তমানে আটটির মধ্যে চারটি জেলার বিভাগীয় জেলা এটি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থ-সামাজিকভাবে অনেকটাই পিছিয়ে এই জেলা। জেলার অন্যতম আর্থিক ভিত্তি চা শিল্প। কিন্তু তাও বর্তমানে দুর্দশাগ্রস্ত।
তবে পাশাপাশি প্রাপ্তিও রয়েছে বেশ কিছু। দীর্ঘ প্রত্যাশার পর কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হয়েছে। একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল কলেজও পেতে চলেছে জলপাইগুড়ি।
তবে দুঃখের বিষয়, খুব সচেতন মানুষ ছাড়া অনেকে জানেই না যে, আজ তাঁদের প্রিয় জেলার জন্মদিন। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাস একেবারেই অজানা। সরকারি তরফে জেলার জন্মদিন পালন করার সেরকম কোনও উদ্যোগ নেই। একমাত্র দেড়শো বছর পুর্তিতেই বড়মাপের অনুষ্ঠান করা হয়েছিল। তবে দু-একটি সামাজিক সংগঠন নিজেদের মতো করে জেলার জন্মদিন পালন করে। শনিবার জলপাইগুড়ি শহরের বাবুঘাটে সেরকমই একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল সমাজ ও নদী বাঁচাও নামে একটি সংগঠনের তরফে। উপস্থিত ছিলেন কিছু বর্ষীয়ান মানুষ। ছিলেন দুই প্রাবন্ধিক উমেশ শর্মা এবং আনন্দগোপাল ঘোষ। কেক কেটে দিনটি উদযাপন করেন তাঁরা। সঙ্গে বেশ কিছু পড়ুয়াকেও আনা হয়।
পড়ুয়ারা জানায়, আজকের দিনটির বিশেষত্ব তাদের জানা ছিল না। তবে তারা কথা দিয়েছে, এবার নিজের জেলার ইতিহাসকে বোঝার চেষ্টা করবে।