গোটা গ্রামের মানুষের হেঁশেল যেন আজ পথে। আজ আর ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে রান্না নয়। খোলা আকাশের নিচে, পুকুর ধারে উনুন তৈরি করে চলছে রান্নাবান্না। আর সঙ্গে চলছে পাত পেড়ে খাওয়া। না, এটা কোনও বনভোজন নয়। কয়েকশো বছর ধরে এই নিয়ম মেনে আসছেন গ্রামবাসীরা।
কিন্তু কেন এক বিশেষ দিনেই এই নিয়ম পালন করেন গ্রামবাসীরা? আর কেনই বা কোনও রোগের ভয় না করে পুকুরের জলে রান্না করে খান সবাই? পুকুরের জল শুদ্ধ কিনা, সেই বিচারে যান না এঁরা। শুধু বিশ্বাসে ভর করে একদিন চলে এই গণরান্না। উঃ ২৪ পরগনার হাবড়া ফুলতলা মণ্ডলপাড়া এলাকার ঘটনা। এখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একত্রিত হন সকলে।
কথিত আছে, কয়েকশো বছর আগে এলাকায় কলেরা মহামারীতে একাধিক মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছিল। তারপরে এক মুসলিম গৃহবধূ স্বপ্নাদেশ পান, ওই এলাকার পুকুরের জল নিয়ে রান্না করে খেলে কলেরা রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। তারপর থেকেই শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসের অমাবস্যার পর প্রথম সোমবার এই রান্নার আয়োজন। সেই থেকে প্রত্যেক বছর গ্রামের সমস্ত পরিবার রাস্তার দু'ধারে উনুন বানিয়ে রান্না করে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করে। প্রত্যেক পরিবারের আত্মীয়-স্বজনও দূর দিগন্ত থেকে চলে আসেন এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে।
প্রথমে মন্দিরে পুজো দিয়ে তারপর শুরু হয় তাঁদের রান্না উৎসব। সারা বছর এই দিনটির অপেক্ষা করে থাকেন তাঁরা, এমনটাই জানালেন গ্রামবাসীরা। এই উৎসব উপলক্ষে সাতদিন ধরে চলে নানা অনুষ্ঠান। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, তারপর থেকে কোনওদিন আর ওই এলাকায় কলেরা রোগ দেখা যায়নি। আর তাই পুকুরের জল ভালো না মন্দ, সে তর্ক আজ তোলা থাক। শুধুমাত্র বিশ্বাসে ভর করেই সেই ট্র্যাডিশন আজও চলছে।