শিল্পপতিদের যেন এজেন্সি (Central Agency) দিয়ে বিরক্ত না করা হয়। আমরা চাই কেন্দ্রীয় সরকার সবরকম সাহায্য করুক। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে উপস্থিত রাজ্যপালকে (Governor Dhankar) বিষয়টি দেখতে আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata)। প্রায় দু'বছর বন্ধ থাকার নিউ টাউনে বুধবার থেকেই শুরু দু'দিনের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। ১৯টি দেশের প্রায় আড়াইশো প্রতিনিধি এই সম্মেলনে উপস্থিত।
এদিন রাজ্যপালের বক্তৃতা দিয়ে সম্মেলনে ঢাকে কাঠি পড়ে। রাজ ভবন বনাম নবান্ন সংঘাতের আবহ এড়িয়ে এদিন রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী দু'পক্ষই সৌজন্যের সুতোয় বাঁধা পড়েন। এমন পরিবেশেই সম্মেলন মঞ্চে উপস্থিত রাজ্যপালের কাছে এই আর্জি করেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলত লগ্নি টানতে যাতে বাধা দেওয়া না হয়, বিরক্ত না করা হয় শিল্পপতিদের। সেই বার্তাই পরোক্ষে দিলেন মমতা। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের সমালোচনায় সরব বিরোধী দলগুলো। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেছেন, 'শিল্পপতিদের সুরক্ষার দায়িত্ব উনি নিচ্ছেন। অনেকেই ভয়ে বাংলায় ঢুকতে চায় না। কিন্তু এই রাজ্যে কারা শিল্পপতি, যাঁদের অ্যাকাউন্টে গোরু-কয়লা পাচারের টাকা ঢোকে। আর এই বেনিয়ম খোঁজার দায়িত্ব তো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর। বড় শিল্পপতিরা এই রাজ্যে না আসে, অন্য রাজ্যে কেন বিনিয়োগ করছেন? তার জবাব একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী দিতে পারবেন।'
এদিকে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন শুরুর আগে সিঙ্গুরের জমি পরিদর্শনে যান বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সেই কর্মসূচি শেষে বাংলার শিল্প সম্ভাবনা নিয়ে তাঁর মন্তব্য, 'উন্নয়নে বিজেপি বাধা দেয় না। আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি শিল্প টানতে কোনও যদি প্রতিনিধিদল পাঠান, বিজেপিকে বলা হলে বিজেপিও থাকবে সেই প্রতিনিধি দলে। আমাদের প্রতিনিধি যাবে গুজরাত, মধ্যপ্রদেশে, সেখানে গিয়ে বলবেন পশ্চিমবঙ্গে আসুন শিল্পে বিনিয়োগ করুন। কিন্তু শিল্প তখনই স্থাপন হবে, যখন শিল্পের পূর্ব শর্তগুলো পালন করবে সরকার। শুধু হাওয়ায় কথা বললে হবে না, এটা তৃণমূলের সভা নয়, উনি হুইলচেয়ারে বসে বলে দিলেন, আর সবাই শুনে নিল। শিল্পপতিরা তাঁদের কষ্টার্জিত টাকা বিনিয়োগ করবেন, সেই টাকা মার যাবে কি যাবে না, এই বিষয়টা তো তাদের নিশ্চিত করতে হবে। যতক্ষণ না তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে বিনিয়োগ আসবে না।'
তাঁর অভিযোগ, 'এই সরকারের কোনও পরিষ্কার শিল্পনীতি নেই। আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর, সিন্ডিকেটরাজ, তোলাবাজি এবং তৃণমূলের দাদাগিরি যতদিন চলবে, ততদিন রাজ্যে শিল্প হবে না।'
কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান বলেন, '১১ বছরের ব্যর্থতা ঢাকার মঞ্চ এই শিল্প সম্মেলন। শিল্পে বাংলা পিছিয়ে সেই ব্যর্থতা ঢাকার মঞ্চ এই সম্মেলন।' প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য জানান, সংঘাত আর সেটিংয়ের আবহে দু'জন একমঞ্চে। কোন কেন্দ্রীয় সরকার থেকে উনি সাহায্য চাইছেন? যারা শিল্প না এনে হনুমান মন্দির বানাচ্ছে! চারটি হনুমান মন্দিরের বদলে চারটি শিল্প আসতে পারত। মুখ্যমন্ত্রী ১১ বছরে শিল্প আনেননি, বরং শিল্পকে তাড়িয়েছেন। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন নাটক, মানুষকে প্রভাবিত করবে না।'