যেন রীতিমতো মরণ ফাঁদ। সেচ খালের সেতু পড়ে রয়েছে ভগ্নদশায়। দুর্গাপুরের কাঁকসার রাজকুসুম গ্রামের ভিতরে দামোদর নদের এই সেচ খাল। ঝুঁকির পারাপার চললেও হুঁশ নেই প্রশাসনের। সেচ দফতরের আধিকারিক ও স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সেচ খালের ক্যানাল মেরামতির আশ্বাস দিলেও তাতে আর ভরসা রাখতে পারছে না স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একেবারে ভগ্নদশা সেচ খালটির। বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। রাস্তার একাংশ ভেঙে গিয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে সেতুটি। দিনের বেলায় যেমন তেমন, রাতের অন্ধকারে এই সেতুর রাস্তা রীতিমতো ভয়ানক। সেতুর রাস্তার ভাঙা অংশে যে কেউ পা হড়কে ক্যানালের জলে পড়ে যেতে পারে, ঘটতে পারে মৃত্যুর ঘটনাও। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সেতুর এই ভগ্নদশা একদিন-দুদিনের নয়। প্রায় মাস ছয়েক হয়ে গেল দামোদর সেচ খালের ক্যানালের এই সেতু বিপজ্জনক অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বেরিয়ে রয়েছে লোহার মরচে ধরা রড। জোড়াতাপ্পি দিয়ে সেতুর এই বিপজ্জনক অংশে মাস দুয়েক আগে একটি সিমেন্টের ঢালাইয়ের ঢাকনা দিয়ে দায় সেরেছিল সেচ দফতর। কিন্তু স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতের অন্ধকারে চোরেরা সেই ঢাকনাও চুরি করেছে। বিপজ্জনক ভাঙা অংশ আগের মতো হয়ে রয়েছে। ফলে দুর্ভোগে কাঁকসার রাজকুসুম, গারাদহ, তেলিবনি সহ আশাপাশ এলাকার প্রায় ছ-সাতটি গ্রামের বেশ কয়েক হাজার মানুষ।
কাঁকসা থানা, বিডিও অফিস, পানাগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কাঁকসা ভূমি রাজস্ব দফতর যাওয়ার জন্য় কম দূরত্বর রাস্তা এই সেচ খালের সেতু। আতঙ্কে এলাকার মানুষ প্রায় দশ থেকে বারো কিলোমিটার ঘুরপথে অন্য রাস্তা দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যতে পৌঁছচ্ছেন। স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে প্রশাসনিক সবস্তরে জানিয়েও মেলেনি সুরাহা। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় গ্রামবাসীরা।
কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির পঞ্চায়েত সদস্য তথা কাঁকসা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি দেবদাস বক্সী অবশ্য় স্বীকার করে নিলেন গ্রামবাসীদের এই সমস্যার কথা। বর্ধমান সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলে সেতুর সংস্কারের প্রতিশ্রুতিও দিলেন তিনি।
তবে এই ইস্যুতে তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। পূর্ব বর্ধমান জেলা সদর বিজেপির সহ সভাপতি রমণ শর্মার কটাক্ষ, এর নামই হয়তো এগিয়ে বাংলা।
টেন্ডার হয়ে গেছে, কাজ শুরু হবে তাড়াতাড়ি, প্রতিক্রিয়া দেন দামোদর বর্ধমান ডিভিশনের সেচ আধিকারিক এল এন সিং। তবে শুধু আশ্বাসে আর ভরসা রাখতে পারছেন না স্থানীয় রাজকুসুম, গারাদহ, তেলবনি সহ আশপাশ গ্রামের বেশ কয়েক হাজার মানুষ। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কোনও রকমে জোড়াতাপ্পি দিয়ে কাজ করা হয়। তাই চেনা মিথ্যে প্রতিশ্রুতির জালে আর বন্দি থাকতে চান না গ্রামবাসীরা। এখন নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি কবে মিলবে, তা বলবে সময়।