হামাগুড়ি দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, ফিরলেন পায়ে হেঁটে। জটিল অস্ত্রোপচার করে নজির সৃষ্টি করল পুরুলিয়া দেবেন মাহাত গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। মিলল জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য। বাড়ি ফিরলেন বছর ৪৫-এর কনস্টেবল গোপালচন্দ্র দাস।
রাজ্য পুলিসের কনস্টেবল পদে নিয়োগ ১৮ বছর আগে। বর্তমানে তিনি রঘুনাথপুর থানায় কর্মরত। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু, প্রায় ১৮ মাস আগে, আচমকাই সমস্যা দেখা দেয় তাঁর পায়ে। হঠাৎই পা ফুলতে শুরু করে। ডিউটি চলাকালীন পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি হারান। সেই থেকে পায়ে হাঁটার ক্ষমতাও ছিল না। অনেক জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছেন, কিন্তু লাভ হয়নি। বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। অবশেষে, হামাগুড়ি দিয়ে চলতেন। চিকিৎসায় নতুন দিশা দেখায় যে দক্ষিণ ভারত, সেখানে গিয়েও ফল মেলেনি। তাই, হাঁটা তো দূরঅস্ত, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন গোপালচন্দ্র দাস। ভেবেছিলেন, কর্মজীবনেও ইতি টানতে হবে। একরকমই অনিশ্চয়তায় ভুগছিলেন তিনি।
চিকিৎসায় কোনও সাড়া না পেয়ে শেষে ২০২১ এর ডিসেম্বর মাসে পুরো বিষয়টি জানিয়ে স্বেচ্ছা অবসরের সুবিধা নিতে পুরুলিয়ার পুলিস সুপারের দ্বারস্থ হন। পুলিস সুপার মেডিক্যালি আনফিট ঘোষণার জন্য পাঠান পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। কিন্তু, আনফিটের বদলে, সেখানেই গোপালবাবুকে জীবনের পথে চলার নতুন দিশা দেখান অর্থোপেডিক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর কৃষ্ণপ্রসাদ সর্দার। জানান, তিনি আবারও আগের মতোই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন, হাঁটতেও পারবেন। ফিরে পাবেন সুস্থ স্বাভাবিক জীবন। প্রথমদিকে, চিকিৎসকের এই কথায় বিশেষ ভরসা করতে পারেননি কনস্টেবল গোপালচন্দ্র দাস। পরে, পুলিস সুপারের নির্দেশে পুরুলিয়া দেবেন মাহাত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৫ জন চিকিৎসক নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয় গোপালবাবুর চিকিৎসার জন্য।
গোপালবাবুর উরুসন্ধি এতটাই ক্ষয়ে গিয়েছিল যে তিনি নড়াচড়া করতে পারেন না। ওষুধপত্র ও শারীরিক থেরাপি যখন হার মেনেছে, তখন হিপ প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন চিকিৎসক কৃষ্ণপ্রসাদ সর্দার। হিপ প্রতিস্থাপনে উরুসন্ধির অসুস্থ তরুণাস্থি ও হাড়কে কেটে বাদ দিয়ে তার জায়গায় কৃত্রিম জয়েন্ট বসানো হবে বলে জানানো হয় চিকিত্সকদের পক্ষ থেকে।
সেইমতো গত ২১ শে ডিসেম্বর গোপালবাবু পায়ে-হাতে ভর রেখে হামাগুড়ি দিয়ে এসে ভর্তি হন পুরুলিয়া দেবেন মাহাত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জিকাল ওয়ার্ডে। জেলা পুলিস সুপারের আর্থিক সহায়তায়, ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০২১ এর ২৩ শে ডিসেম্বর প্রথম এবং ৪ জানুয়ারিতে দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার হয়।
প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়। অস্ত্রোপচারের পরের দিন থেকে স্বাভাবিকভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে এবং হাঁটতে শুরু করেন পুলিসকর্মী গোপালচন্দ্র দাস। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরে তিনি চিকিৎসক কৃষ্ণপ্রসাদ সর্দারের কাছে কৃতজ্ঞ। পুরুলিয়া জেলা হাসপাতালে পরিকাঠামোতে খামতি থাকার পরেও জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য অর্জন করতে পেরে খুশি অর্থোপেডিক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর কৃষ্ণপ্রসাদ সর্দার। একজনকে হাঁটার ক্ষমতা ফিরিয়ে খুশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।