ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টা নাগাদ ঘটে এই দুর্ঘটনা। জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির কাছে বিকানির এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯। আহত বহু। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রেল কর্তৃপক্ষের। আর ওই ট্রেনেই তিন মাস পর চিকিৎসার টাকা জোগাড় করে বাড়ি ফিরছিলেন চিরঞ্জীব বর্মন। এরকম মর্মান্তিক পরিণতি হবে বোধহয় ভাবতে পারেননি কেউ।
কোচবিহারে চান্দামারী এলাকার বাসিন্দা চিরঞ্জীব বর্মন বছর ২৩-এর কোঠায়। ময়নাগুড়ির ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তিনি। দরিদ্র পরিবারের সন্তান চিরঞ্জীব। স্থানীয় সূত্রে খবর, বাবা মা নিয়ে তিনজনের পরিবার। কয়েকমাস আগে তাঁর পেটে একটি পাথর ধরা পড়ে। চিকিৎসক অপারেশনের কথা বলেন। কিন্তু অপারেশন করার মতো অর্থ ছিল না তাঁদের। তিন-চার মাস আগে ভিনরাজ্য় জয়পুরে রওনা দেন কাজের উদ্দেশ্যে। কাজ করে টাকা জমিয়ে চিকিৎসার খরচ জোগাড় করেছিলেন। আর সেই টাকা নিয়েই বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। তখনই ঘটে যায় দুর্ঘটনাটি। অকালে চলে যেতে হল তরতাজা প্রাণকে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রথমে লোকমুখে শোনে রেল দুর্ঘটনার খবর। তারপর টিভিতেও তিনি দেখতে পান। এরপর তিনি চিরঞ্জীবের পরিবারকে এসে খবর দেন। চিরঞ্জীবের বাবা হাঁটতে চলতে পারেন না। চিরঞ্জীবই একমাত্র সংসারের ভরসা ছিলেন। চিরঞ্জীবের মা খবর পাওয়া মাত্র ময়নাগুড়ির হাসপাতালে ছুটে যান। সঙ্গে কয়েকজন এলাকাবাসী ও আত্মীয়রাও যায়। ছেলের দেহ নিয়ে তবেই ফিরবেন বলে জানান।
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন চিরঞ্জীবের আত্মীয়রা। ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। এখন চিরঞ্জীবের পরিবারের কী হবে? কীভাবে চলবে সংসার? সরকারের আর্থিক সাহায্যে কতদিনই বা চলবে তাঁদের? একাধিক প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সকলের মধ্যে। যদিও মৃত ও আহতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদানের কথা ঘোষণা করেছে রেল। কিন্তু টাকা পেলেও মা কি ফিরে পাবেন তার সন্তানকে? ময়নাগুড়ির মৃত্যু রেখে গেল অনেক প্রশ্ন।