কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছিনাথ বহুরূপীকে নিশ্চয়ই মনে আছে। বাঘরূপী ছিনাথ দেখে পড়ি কি মরি অবস্থা। আর আজ বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর পৌরসভার সদর রাস্তার ওপর দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গেল একজোড়া মহাদেব এবং একজোড়া হনুমানকে।
মুখে রং। মাথায় জটা। গায়ে বাঘছাল, হাতে ঝোলা। শিবের হাতে আবার ডমরু ও ত্রিশূল। আর কেউ আবার শরীর ঢেকেছেন সাদা মখমলি পাটের আস্তরণে। এভাবেই বিষ্ণুপুর পৌরসভার বিভিন্ন প্রান্তে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে দুই শিব, দুই হনুমান।
তবে শিব কৈলাস থেকে আসেননি, আর হনুমানও জঙ্গল থেকে বেরোয়নি। মহাদেব চৌধুরী, শ্যাম চৌধুরী, পিন্টু চৌধুরী, চন্দন চৌধুরী। এঁরা সকলেই বীরভূম জেলার লাভপুরের বাসিন্দা। বংশপরম্পরায় শিব এবং হনুমানের সং সেজে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়ান। এটাই তাঁদের জীবিকা। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে অর্জিত অর্থেই এঁদের সংসার চলে। অতিমারী পরিস্থিতিতে রাতের ঘুম উড়েছিল। এখন আবার ধীরে ছন্দে ফিরছে জীবন। তাই পথে আবার শিব ও হনুমানের বহুরূপীরা। কখনও দোকানের সামনে দাঁড়াচ্ছেন। কখনও বা পথচারীরা এসে ভিড় করছে তাঁদের সামনে। কখনও নিজের শহরে, কখনও বা প্রতিবেশী রাজ্যেও যান এঁরা।
সরকার পাশে আছে এঁদের। মাসিক ভাতা হিসাবে হাজার টাকা করে দেওয়া হয় সরকারি তরফে। তবে সেই টাকায় পেট চলে না তাঁদের। নানা চরিত্রের সাজ, পোশাক, মেকআপ কিনতেই সমস্ত টাকা খরচ হয়ে যায়। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনো অবস্থা।
সেই ট্র্যাডিশন আজও চলছে। বংশ পরম্পরায় বছরের পর বছর ধরে এই পেশাকে ধরে রেখেছেন মহাদেব, শ্যাম, পিন্টুর মতো মানুষেরা। চরিত্র বদলেও এদের দিনযাপনের চিত্রের বদল হয় না। এলাকায় ঘুরে ঘুরে সামান্য উপার্জন আর সরকারি সামান্য কিছু ভাতায় অর্থকষ্টে দিন কাটে পরিবারগুলির। পেশাকে টিকিয়ে রাখতে চাইছেন প্রশাসনিক সাহায্য।