Share this link via
Or copy link
তারকেশ্বর (tarakeswar) পুরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের জয়কৃষ্ণবাজার (jaykrishna bazar) এলাকায় একটি ছোট্ট টালির চালার ঘরে স্বামী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস। তাও আবার ভাড়াবাড়ি। ঘরে পড়ে কয়েকশো সার্টিফিকেট, পুরস্কার ও মেডেল। স্বামী সন্তোষ দাস ট্রেনে হকারি করেন। কিন্তু তাতে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানো দায়। তার উপর ছেলেমেয়ের আবার পড়াশোনা। গত ২৭ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত তামিলনাড়ুর জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়া ৪২ তম জাতীয় মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলার হয়ে অংশগ্রহণ করেন বুল্টি। ২০০ মিটার দৌড়, ৪০০ মিটার দৌড় এবং ৪০০ মিটার হার্ডলস-এ স্বর্ণপদক লাভ করেন তিনি। অন্যদিকে ১০০ ও ৪০০ মিটার রিলেতে রৌপ্যপদক হাসিল করেন তিনি।
বুল্টি গত ২৫ বছর ধরে কড়া অনুশীলন করে আসছেন দারিদ্রতাকে হার মানিয়ে। প্রথম সাত-আট বছর তাঁর কোচ থাকলেও পরবর্তীকালে তিনি নিজেই অনুশীলন চালিয়ে যান। অনুশীলনের জন্য জোটেনি ভালো ট্র্যাক প্যান্ট, গেঞ্জি অথবা ভালো জুতো। এমনকি প্রয়োজনীয় খাবারও জোটেনি কোনও কোনওদিন। আবার কোনওদিন আলুভাতে দিয়ে পান্তাভাত বা কোনওদিন শাকভাত। জোটেনি একটা গোটা ডিমও। তবুও অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়েই চলত দিনের পর দিন অনুশীলন। গত ২৫ বছরে অনুশীলনের ফল হিসাবে বাড়িতে থাকা টিনের ট্যাঙ্কে ভর্তি হয়ে আছে বেঙ্গল এবং জাতীয় স্তরের হাজার হাজার শংসাপত্র এবং সোনা, রুপো ও ব্রোঞ্জের মেডেল।
চোখে ছিল অলিম্পিক খেলার স্বপ্ন, তা হয়নি ঠিকই। কিন্তু এবার সামনে হাতছানি দিচ্ছে আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতা। তবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্থিক অনটন। আন্তর্জাতিক স্তরে অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হবে মালয়েশিয়ায়। তারজন্য প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন বুল্টি। কিন্তু মালয়েশিয়ায় অংশগ্রহণ করতে গেলে খরচ হবে প্রায় দুলাখ টাকা। নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা সংসারে। কোথায় পাবেন এত টাকা? সেই চিন্তাই কুরে কুরে খাচ্ছে বুল্টিকে। হন্যে হয়ে ঘুরছেন টাকা জোগাড়ের আশায়। তামিলনাড়ু যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এবং দু-একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পাশে দাঁড়িয়েছিল। তবে এবার কী হবে, সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে বুল্টির।
মুখ্যমন্ত্রীকে বলুন না, যে কোনও একটা ছোট কাজ দিতে, তাহলে স্বপ্নটা পূরণ করতে পারি। চোখের জল ফেলতে ফেলতে এমনই করুণ আর্জি জাতীয়স্তরে সদ্য তিন তিনটি সোনার পদক (gold medal) জয়ী অ্যাথলেটিক্স (athletics) বুল্টি রায়ের।