সাপের কামড়ের পর ওঝার বুজরুকিতে সময় নষ্ট। আর তাতেই মাত্র চার বছর বয়সেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল সঞ্জয় হাঁসদা নামে এক শিশু। ঘটনার পর থেকেই শোকের ছায়া পরিবার সহ এলাকায়। সাপে কামড়ালে ওঝা, গুণিন নয়, রোগীকে দ্রুত নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে- এই বার্তা দিতে এবার সঞ্জয় হাঁসদার গ্রামেই সচেতনতা শিবির করল যুক্তিবাদী সমিতি।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুন বাঁকুড়ার ইন্দাস থানার বনকী গ্রামে ঘুমন্ত অবস্থায় সাপ কামড় দেয় বছর চারেকের সঞ্জয়কে। পরিবারের লোকজন বুঝতে পারেননি, সঞ্জয়কে সাপে কামড় দিয়েছে। এরপর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ক্রমশই পেটে যন্ত্রণা ও চোখ বন্ধ হতে থাকে। অসুস্থতা কাটাতে সঞ্জয়কে স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যায় পরিবার। আর সেখানেই ঘটে বিপত্তি। ওঝা সঞ্জয়ের কপালে সিঁদুরের টিপ দিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় ঝাড়ফুঁক করে। পাশাপাশি ফের তাঁর কাছে ঝাড়ফুঁকের জন্য নিয়ে যেতে বলে। ওইদিন দুপুরের পর সঞ্জয়ের অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে। এরপর পরিবারের লোকজন সঞ্জয়কে স্থানীয় ইন্দাস ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। তবে সেখানেই মারা যায় সঞ্জয়। সাপের কামড়ের পর লক্ষণ না জানা ও ওঝার উপর অন্ধবিশ্বাস, এসবের কারণেই সঞ্জয়ের মৃত্যু হয়েছে জানতে পেরে একযোগে আসরে নামে স্থানীয় ব্লক প্রশাসন, ব্লক স্বাস্থ্য দফতর ও যুক্তিবাদী সমিতি।
শনিবার সন্ধ্যায় বনকী গ্রামে গিয়ে এলাকার মানুষকে সাপের কামড়ের বিভিন্ন লক্ষণ, সাপের কামড়ের হাত থেকে বাঁচার উপায় এবং রোগ, অসুখ বা সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে ওঝা-গুনিনের উপর ভরসা না করার বার্তা দেন তাঁরা। পাশাপাশি রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। রীতিমত প্রোজেক্টরের মাধ্যমে গ্রামবাসীদের বোঝানো হয়, যেকোনও রোগ অসুখ সারানোর ক্ষেত্রে ওঝা গুনিনদের বুজিরুকি। বোঝানো হয় ওঝার কাছে না নিয়ে গিয়ে সঞ্জয়কে সময়মত হাসপাতালে নিয়ে গেলে এভাবে প্রাণ হারাতে হত না। স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক, ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক ও যুক্তিবাদী সমিতির এই মিলিত প্রয়াসে কিছুটা হলেও ওঝার প্রতি ওই গ্রামের মানুষের অন্ধবিশ্বাস কাটবে বলেই মনে করছেন উদ্যোক্তারা।