হাঁদা ভোঁদা, নন্টে ফন্টে কিংবা বাঁটুল দ্য গ্রেট , কার্টুন চরিত্র মানেই তিনি। শিশুমনের অলিগলিতে তাঁর অবাধ বিচরণ। আর শুধু শিশু মনই বা কেন, সকল বয়সীদেরই পছন্দের কার্টুন চিত্রে ভরা গল্পগুলি। বয়সের ভারে তিনি আজ ন্যুব্জ। বাঙালির প্রিয় বাঁটুল দি গ্রেট, হাঁদা ভোঁদা, নন্টে ফন্টের মতো চরিত্রের স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ আজ বার্ধক্যজনিত রোগে অসুস্থ। ৯৮ বছর বয়সি এই কার্টুনিস্ট বয়সের ভারে এখন শয্যাশায়ী। মন সতেজ থাকলেও, শরীর সঙ্গ দেয় না তাঁকে।
সেই প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের শিবপুরের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান সস্ত্রীক রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর । শনিবার সকাল সাড়ে নটা নাগাদ তিনি এসে পৌঁছন শিল্পীর বাড়িতে।তাঁর সুস্থতা কামনায় রাজ্যপাল।প্রবীণ এই শিল্পীর চিকিৎসার খরচ রাজভবন থেকেও করা হবে বলে জানান রাজ্যপাল। তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়া হয়েছে। তবে স্মারক কেন আসেনি এ প্রসঙ্গে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।তাঁর শারীরিক অবস্থা জানার পর বর্ষীয়ান শিল্পীর আশীর্বাদ গ্রহণ করেন সস্ত্রীক রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। তিনি বলেন তিনি তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজ এবং দেশের সেবা করেছেন। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানিয়েছেন, বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছেন নারায়ণবাবু। রাজ্যপালকে স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
২০২১-এর পদ্মসম্মান প্রাপক রাজ্যের ৭ জনের মধ্যে পদ্মশ্রী প্রাপকদের মধ্যে ছিলেন হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা কিংবদন্তি কার্টুনিস্ট। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নবতিপর নারায়ণবাবু অসুস্থ, শয্যাশায়ী। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, পুরস্কার নেওয়ার জন্য তাঁর পরিবারের দু’জন সদস্যকে দিল্লি আসতে হবে। পরিবারের তরফে যাওয়ার কথা থাকলেও কেন্দ্রের তরফে জানানো হয় দিল্লি যাওয়ার দরকার নেই। বাড়িতেই পৌঁছে দেওয়া হবে অভিজ্ঞানপত্র। তবে আজও মেলেনি অভিজ্ঞানপত্র।
এখন শিবপুর বাজারের বাড়িতে একা দিন কাটে বাংলা কার্টুন জগতের এককালের বর্ষীয়াণ কার্টুনিস্টের। খাট ছেড়ে নামার উপায় তাঁর নেই, কানেও শোনেন না সেভাবে। তবে নিজের উত্তরাধিকারীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস পদ্মশ্রী প্রাপকের।
পেয়েছেন পাঠকের সমাদর। কিন্তু অনেকেই তাঁকে সাহিত্যিক আখ্যা দিতে চাননি। আবার পুরস্কারও মিলেছে জীবনের উপান্তে এসে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-য় মুখ্যমন্ত্রী বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার দিয়েছিলেন। তখনই ঘোষণা হয়েছিল শিল্পী ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত সেই ভাতা নারায়ণবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়লেও, তারপর থেকে একবারও সেই ভাতা পাওয়া যায়নি। কারণ অজানা।
শুধু কার্টুনিস্টই নন তিনি, এঁকেছেন বহু বই এবং পত্রপত্রিকার প্রচ্ছদপট।
২০১২ সালে হাঁদা ভোঁদার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছিল। বিখ্যাত ওই কার্টুন চরিত্রের বর্তমান বয়স ৫৯ বছর। আর বাঁটুল চরিত্র ২০২১ সালে ৫৬ বছরে পা রেখেছে। নন্টে ফন্টেও পা রেখেছে ৫২ বছরে। ২০১৩ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন নারায়ণ দেবনাথ। কিংবদন্তির পরিবারের একটাই আর্জি জীবিত থাকাকালীন শিল্পীর হাতে খেতাব পৌঁছে দিক কেন্দ্র। ৯৮ বছরের তরুণ অসুস্থ শরীরে , মনে নয়। তাই মুখের হাসি এখনও অমলিন।একই কার্টুনিস্টের তিনটি কার্টুনের প্রতিটির ৫০ বছর ধরে চলা বিরল। সেখানেই ব্যতিক্রমী নারায়ণ দেবনাথ।