এ যেন এক আঁতকে ওঠার ছবি। শৈশব বুঁদ হয়ে রয়েছে নেশার জালে। এদের মধ্যে কেউ ট্রেনের কামরা পরিষ্কার করে দু-চার পয়সা আয় করে। আবার কেউ বা ভিক্ষাবৃত্তি করে টাকা রোজগার করে। সারা দিনের শেষে উপার্জন করা টাকা এরা দেদার উড়িয়ে দিচ্ছে নেশার পিছনে। আর যে নেশার জালে বন্দি রানি, সাগরের মতো আরও অনেক শৈশব। এরা জানে এই নেশা একটা সময় নিশ্চিত মৃত্যু ডেকে আনবে। কিন্তু তাও নেশার এক মায়াজালে বন্দি। মাঝে মাঝে পড়াশোনা করে বটে এরা, কিন্তু মনটা পড়ে থাকে সেই নেশার দিকেই।
ছবিটা দুর্গাপুর স্টেশনের বাইরে বাসস্ট্যান্ডের। যেখানে গেলেই দেখা মিলবে এই বাচ্চাদের।
এবার দেখা যাক, কী করে নেশার জালে জড়িয়ে যাচ্ছে এই শৈশব। দাম মাত্র ৩৫ টাকা। বিশেষ এই কেমিক্যাল ফ্লুইড মেলে বিশেষ ধরনের এক টিউবে। এক্কেবারে ডেনড্রাইট আঠার ঝাঁঝালো গন্ধে ভরা এই কেমিক্যাল ফ্লুইড টিউব দুর্গাপুর নয়, মেলে আসানসোল রেল স্টেশনের বাইরে। এটা আনতে কখনও কখনও এই শৈশবের দল ভিক্ষাবৃত্তির বেশে চলে যায় আসানসোল। আবার কেউ কেউ ট্রেনের কামরা ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করতে করতে পৌঁছে যায় নেশার এই গন্তব্যে।
এবার আসা যাক কীভাবে এই নেশার বুঁদে ডুবে যায় এই শিশুরা। প্রথমে ওই বিশেষ টিউব থেকে তরল পদার্থ দু-ফোঁটা বের করে ফেলা হয় কাপড়ের টুকরোতে। এবার সেই টুকরো মুখের ভিতর ঢুকিয়ে নিয়ে শুরু হয় শ্বাস নেওয়ার কাজ। আর তরল ফ্লুইডের ঝাঁঝালো এক গ্যাস নেশার রসদ যোগায়। ধীরে ধীরে নেশার জালে এই রানি, সাগররা পৌঁছে যায় এক অন্য জগতে। কখনও কখনও নেশার টাকা জোগাতে দুর্গাপুর স্টেশনের যাত্রীদের টাকাপয়সা এমনকি মোবাইল চুরি করতেও পিছপা হয় না এই শিশুরা। এক কথায় যাই পাওয়া যায়, তাই চুরি করে বিক্রি করে দিয়ে নেশার রসদ জোগাড় করে এরা।
দুর্গাপুর স্টেশন বাসস্ট্যান্ড জুড়ে এই নেশার রসদের ভরপুর আয়োজন থাকলেও রহস্যময় অজ্ঞাত কারণে নীরব থাকে পুলিস-প্রশাসন। নীরব থাকে রেল পুলিসও। আর এই সুযোগে যা হওয়ার ঠিক তাই হচ্ছে,পড়াশোনার বইব্যাগ নয়, বিশেষ ফ্লুইডের এই টিউব এখন হাতে হাতে ঘুরছে দুর্গাপুর স্টেশনের বাইরে থাকা এই শিশুদের। যারা ভালো থাকতে চাইছে তারাও স্রেফ কৌতূহলের বশে জড়িয়ে পড়ছে নেশার এই জালে।
দুর্গাপুর স্টেশনের যাত্রীদের দাবি, অবিলম্বে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। নচেৎ এইভাবে নেশার জালে জড়িয়ে গিয়ে শৈশব অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে। তাহলে কি এইভাবেই এক অন্ধকার দিশাহীন পথে এগিয়ে যাবে শিশুরা, অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে যাবে শৈশবের আধো আধো গলা? উত্তর মেলাটাই বড়ই কঠিন।