শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন অধরা। টেট উত্তীর্ণরা কেউ মাঠে দিনমজুর খাটছেন, আবার কেউ গৃহবধূ। হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর চোখে এখন শুধু হতাশা। তেমনই নদিয়ার শম্ভুনগর এলাকার টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থী সুখেন দত্ত বর্তমানে দিনমজুর। চাকরির স্বপ্ন ভুলে দিনের পর দিন মাঠে কাজ করে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন। কারণ বাড়িতে অসুস্থ মায়ের ওষুধ জোগানো দায় হয়ে উঠেছে।
সুখেনের বাবা বিড়ি শ্রমিক, কোনওরকমে ২ লক্ষ টাকা জোগাড় করে টেট প্রশিক্ষণের জন্য পড়িয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল, ছেলে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য আনবে। রাজ্য সরকারের টেট-দুর্নীতির বেড়াজালে পড়ে সমস্ত স্বপ্ন ভেঙে চুরমার দত্ত পরিবারের। আশা ভুলে সংসার চালানোর জন্য চাকরিপ্রার্থীর হাতে তুলে দিলেন কাস্তে। কিন্তু তাঁর মনে এখনও হাইকোর্টের প্রতি ভরসা। শুধু তাই নয়, এমন একাধিক টেট উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের হাতে এখন কলমের জায়গায় কোদাল আর খুন্তি। পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার পরীক্ষার্থী অনেক স্বপ্ন নিয়ে টেট পরীক্ষায় বসেছিলেন শিক্ষক হওয়ার আশায়। প্রায় ১৬০০০ জন পরীক্ষার্থী টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরপর ধাপে ধাপে তাঁদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করার কথা ঘোষণা করে সরকার।
২০১৪ সালের পর কেটেছে প্রায় আট বছর। বহু পরীক্ষার্থীর মধ্যে বেশ কয়েক হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হলেও বাকিরা হাতে এখনও পাননি নিয়োগপত্র। গিয়েছে প্রশাসনের দরজায় দরজায়। একাধিকবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন এখনও তাঁদের অধরাই রয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, বিবাহিত জীবনের সংসারে হাল ধরতে চিরাচরিত প্রথামতো গৃহবধূ হয়ে কলম ভুলে খুন্তি নেড়ে চলেছেন পম্পা সাহা। সামিল হয়েছিলেন বিক্ষোভে, কিন্তু মেলেনি সুরাহা। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ভুলে সংসারের কাজে হাতে তুলে নিয়েছেন খুন্তি।
এখন প্রশ্ন, পড়াশোনার মূল্য কি কোদাল-খুন্তিতেই শেষ হয়ে যাবে? নাকি তাঁদের হাতে আবারও শিক্ষার কলম উঠে আসবে? সেই স্বপ্নেই রাত কাটছে হাজার হাজার টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের।