কোচবিহার জেলায় ছড়িয়ে আছে রাজাদের ইতিহাস। এই জেলার তুফানগঞ্জ ১ নং ব্লকের অন্তর্গত নাটাবাড়ি ১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েত। এই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দেবোত্তর চারালজানি এবং চাড়ালজানি গ্রাম। গ্রাম দুটির ৫৬ বিঘা জমি ঘিরে রেখেছে বনভূমি। যে বনভূমির পরতে পরতে রাজকাহিনী। গ্রামের মানুষ জানেন তা। সেই সব তথ্য আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে নাটাবাড়িতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি তুলেছে এলাকার মানুষ। তাঁদের আশা, পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদেরও কর্মসংস্থান হবে।
এই এলাকার দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে নাটাবাড়ির বলরাম মন্দির এবং নাটাবাড়ির হেরিটেজ রোড উল্লেখযোগ্য। নাটাবাড়ির বলরাম মন্দিরের বহুদিনের পুরোহিতের মুখেও শোনা গেল রাজরাজাদের কথা।
কথিত আছে, কোচবিহারের রাজা মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুর, জিতেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুর, জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণ ভুপ বাহাদুররা এই বনভূমিতেই শিকারে আসতেন। এই এলাকা থেকেই বাঘ, শিয়াল, বন শূকর, বড় খরগোশ, সজারু শিকার করতেন। যা পরবর্তীতে রাজবাড়িতে নিয়ে যেতেন। বনভূমির পুরনো গাছ এখন আর নেই। ১৯৮৩ সালে প্রাচীন শাল গাছগুলি কেটে নতুন গাছ লাগানো হয়। বর্তমানে সেগুন, জারুল, চাপ গাছ লাগানো হয়েছে। ৫৬ বিঘা জমির মধ্যে এখনও প্রায় ১২ বিঘা জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এই বনভূমির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে খাটাজানি নদী। যা আজ মৃতপ্রায়। এক সময় শিকার করতে এসে এই নদীর জলই পান করত রাজার সঙ্গে থাকা হাতিঘোড়া।
এই নদী নিয়েও রয়েছে আলাদা গল্প। এই এলাকাতেই কথিত আছে, খাটাজানি নদী দিয়েই একসময় চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্য জাহাজ চলাচল করত। পাশাপাশি যে কোনও পবিত্র অনুষ্ঠানে গঙ্গা নিমন্ত্রণ করতে এলে সোনার চালুনি ভেসে উঠত। অনুষ্ঠান শেষ হলে আবার সেই চালুনি এই নদীতেই ফেরত দিতে হত। এমনই এক সমৃদ্ধ বনাঞ্চলকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি তুলেছেন নাটাবাড়ি ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা চাইছেন, এই ৫৬ বিঘা জমি এবং নদীকে সাজিয়ে তোলা হোক। বনাঞ্চল এবং নদীকে ঘিরে গড়ে উঠুক পার্ক। মৃতপ্রায় নদীটি খনন করে নৌকা বিহার বা বোটের ব্যবস্থা করা হোক। সরকারিভাবে এই প্রকল্প চালু হলে উপকৃত হবে এই এলাকার মানুষ। উপকৃত হবে বেশ কিছু বেকার যুবক-যুবতী।