৬০ এর দশকের শেষ থেকে ৮০ র গোড়া অবধি ভারতীয় ক্রিকেটে দুই প্রবাদপ্রতিম পুরুষ দাপটে ক্রিকেট খেলেছেন। বিশ্বের সেই সময়ের আলোচিত দুই ব্যাটার সুনীল গাভাস্কার ও গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। বিশ্বনাথ গাভাস্কারের আগেই ক্রিকেটে আসেন মাত্র ১৯ বছরে। প্রথম টেস্ট খেলেই সেঞ্চুরি পান, কানপুরে। সালটা ১৯৬৯। এরপর সানির আবির্ভাব ১৯৭১ এ ওয়েস্ট ইন্ডিজে। দুজনই ডানহাতি ব্যাটার ছিলেন। সুনীল ওপেন করলেও বিশ্বনাথ নামতেন ৪ নম্বরে। এই ৪ নম্বরটিতে কিন্তু ভারতের সেরা ব্যাটাররা ব্যাট করেছেন। বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলারদের বিরুদ্ধে নেমে গাভাস্কার এবং বিশ্বনাথের অসংখ্য সেঞ্চুরি আছে। দুজনের বয়স প্রায় একই। সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বনাথের আগেই গাভাস্কারকে দলের অধিনায়ক করা হয়, তাঁর অসাধারণ রেকর্ডের জন্য। বিশ্বনাথ আপনভোলা অজাতশত্রু মানুষ ছিলেন, নিজের খেলাটা খেলতেন দৃষ্টিনন্দন ভঙ্গিতে। ইডেনের চোখের মণি ছিলেন ভিশি। তাঁর একটা স্কোয়ারকাট দেখার জন্য মানুষ সারাদিন ইডেনে বসে থাকতো। গাভাস্কারের বোন কবিতার সঙ্গে বিশ্বনাথের প্রেম ও পরে বিয়ে হয়। ফলে তাঁদের সম্পর্কটা শ্যালক-জামাইবাবুর হয়। দুজনের বন্ধুত্ব ছিল গল্পের মতো। সানি দুবার নেতৃত্ব ছেড়ে দেন বিশ্বনাথকে। অবশ্য অধিনায়ক হিসাবে আলাদা করে ভিশির কোনও বিশেষ কৃতিত্ব ছিল না।
কিন্তু খেলার গল্প নয়, এই দুই কিংবদন্তির ব্যক্তিগত ভাবনা ও দিনযাপনের কিছু কথাই বলতে চাই। বিশ্বনাথ দক্ষিণ ভারতীয় নিরামিষাশী পরিবারভুক্ত মানুষ ছিলেন। খেলার ফাঁকে অবসর সময়ে কয়েক বোতল বিয়ার খেয়ে ফেলতেন এবং তার সঙ্গে প্যাকেটের পর প্যাকেট সিগারেট। খুব একটা আড্ডাবাজ মানুষ ছিলেন না ভিশি। বই পড়ার থেকে হিন্দি গানের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল বেশি। বহু টেস্ট ম্যাচ তিনি জিতিয়েছেন ভারতকে। কিন্তু জেতানোর পর মিডিয়া থেকে দূরে থাকতেন। একদমই প্রচার বিমুখ ছিলেন। অন্যদিকে সানি জীবনে কোনওদিন মদ্যপান করেননি। প্রচুর বই পড়তেন, মিডিয়ার প্রিয়পাত্র ছিলেন ও আছেন। তাঁর অবসর কাটতো মিষ্টি বিস্কুট ও চা খেয়ে। মিষ্টি খেতে সানি বরাবরই ভালোবাসেন এবং তা যদি কলকাতার মিষ্টি দই বা রসগোল্লা হয়, তবে তো কথাই নেই। আজ ক্রিকেট ইতিহাসের দুটি প্রাক্তনীর একজন কমেন্ট্রিতে বিদ্যমান। অন্যজন হারিয়ে গিয়েছেন।