খবরের চ্যানেল কিংবা সকালের খবরের কাগজ খুললেই আগে রাজনৈতিক হানাহানি, ভোটযুদ্ধ, মোদী-উত্তরপ্রদেশ কিংবা এ রাজ্যের সাম্প্রতিক আনিস রহস্যমৃত্যু! এছাড়া সংবাদ মাধ্যমে কিংবা সংবাদপত্রে আর কী দেখে লোকে, খেলার খবর? খেলা মানেই তো আবার ক্রিকেট, আইপিএল, রোহিত বনাম বিরাট দ্বন্দ্ব! কিংবা ভারতীয় দলে কেন সুযোগ পেলেন না ঋদ্ধিমান ইত্যাদি ইত্যাদি।
তারপরে আসে আইএসএল অথবা ইপিএল বা স্প্যানিশ লিগ, এর বাইরে খেলার আছে কী? এই নিয়ন্ত্রিত খবরের ধারার দোষ অবশ্যই বর্তায় সংবাদ মাধ্যমের উপর। আমরা যা গেলাই, তাই গেলে পাঠক বা দর্শক। কিন্তু দাবা নামক পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত খেলার খবর ব্রাত্য থেকে যায়। তার খবর কেউ রাখে না, কারণ ওতে বুদ্ধি খরচ বেশি বলে।
কিন্তু আপনারা জানেন কি, এই মুহূর্তে পৃথিবীর ক্রীড়ামহলে সাড়া ফেলে দিয়েছে ৫ খুদে দাবাড়ু। চেন্নাইয়ের প্রজ্ঞানন্দ, নাগপুরের রৌনক সাধবানি, কেরলের নিহাল সারিন, তেলেঙ্গানার অর্জুন এরিগেইসি ও চেন্নাইয়ের ডোমরাজু গূকেশ। এই পঞ্চরত্নই বিশ্ব দাবায় ২৬০০-র উপরে থাকা রেটিংয়ে পৌঁছেছে।
বিশ্বের তাবড় তাবড় দাবাড়ুর কাছে এই তথাকথিত 'খুদেরা' এখন আতঙ্কের কারণ। ঘরে বসে নেটমাধ্যমে এই পাঁচ, বিশ্বের সেরা দাবাড়ুদের মাত করে দিচ্ছে। একটা সময়ে আমরা বিশ্বসেরা হতে দেখেছি বিশ্বনাথ আনন্দকে। তাঁর খেলা দেখেই শৈশব থেকে বড় হওয়া। তাঁর সঙ্গেই বিদেশে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন দিব্যেন্দু বড়ুয়া থেকে কোনেরু হাম্পিরা।
আর আজ গর্বিত করছে প্রজ্ঞারা। ব্যাঙ্ক অফিসার বাবার পুত্র চেন্নাইয়ের প্রজ্ঞানন্দের বয়স মাত্র ২০-র নীচে। এই বয়সে সে বিশ্ব দাবার জগদ্দল পাথর ম্যাগনাস কার্লসেনকে হারিয়ে চমকে দিয়েছে।
সে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে বিশ্বের অন্য নামজাদা দাবাড়ুদের। ইতিমধ্যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদকের তালিকায় নাম এসে গিয়েছে। এদিকে, নাগপুরের রৌনক হতে পারতো কেমিস্ট। কিন্তু কমনওয়েলথ গেমসে নাম কুড়িয়েছে সে। নিহালও বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছে। অর্জুন প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেনে চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার। অর্জুনের খেলা দেখে তাবড় দাবাড়ুরা ভারতের খুদেদের এখন খেলতে অনিচ্ছুক। চেন্নাইয়ের গূকেশ মাত্র ১২ বছর ৭ মাস ৭ দিনেই বিশ্বকাপ খেলেছে।
এই মুহূর্তে ভারতের অবস্থান রাশিয়া, ইউএস, চিন, ইউক্রেনের পরেই। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকের কাছে কি এই তথ্য রয়েছে? প্রজ্ঞানন্দের সাফল্য কি প্রধানমন্ত্রীর কানে গিয়েছে? আসল ক্রিকেট নামক দলগত খেলার ক্যারিশ্মায়, দাবার মতো ব্যক্তিগত খেলা ঢাকা পড়ে গিয়েছে। তাই বরাবর প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতো রয়ে গিয়েছে শতরঞ্জ।