ফুটবল ঈশ্বর সকলকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন ২০২০-র ২৫শে নভেম্বর। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করার পর থেকে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়েন তিনি। এক রাতে খবর আসে বিছানায় প্রয়াত ফুটবলের রাজপুত্র।
এবার সেই মৃত্যুর প্রায় দেড় বছর কেটে গেলেও মারাদোনার মৃত্যু ঘিরে বিতর্ক থামার লক্ষণ নেই। পরিকল্পনা করেই মারাদোনাকে হত্যা করা হয়েছিল কিনা, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে আর্জেন্টিনায়। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন মারাদোনার ব্যক্তিগত নিউরোসার্জন লিওপোল্ড লুপে, মনোবিদ অগাস্টিনা কসচভ এবং মনোবিজ্ঞানী কার্লোস দিয়াজ। অর্থাৎ মোট ৮ জন চিকিৎসককে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। অপরাধ প্রমাণিত হলে প্রত্যেকের ৮-২৫ বছর পর্যন্ত জেল হাজত হতে পারে। আপাতত অভিযুক্তদের দেশ ছাড়তে বারণ করা হয়েছে।
মারাদোনার মৃত্যুর পর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই রিপোর্টেই বলা হয়েছে, মারাদোনার চিকিৎসায় একাধিক ক্ষেত্রে গাফিলতি ছিল। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও অগ্রিম চিকিৎসা করানো হয়নি। কার্যত মৃত্যু মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল 'হ্যান্ডস অফ গডের' মালিককে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
মারাদোনার কন্যাদের নিয়োগ করা কৌঁসুলিদের হাতে কিছু অডিও, টেক্সট মেসেজ আসে। সেখান থেকে ধারণা করা হচ্ছে, মারাদোনা অস্ত্রোপচারের পরেও মদ্যপান করছিলেন, মাদক সেবন করেছিলেন। তা ভালোমতোই জানতেন তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা। তা সত্ত্বেও মারাদোনাকে আসক্তি থেকে সরানোর কোনো প্রচেষ্টাই করেননি তাঁরা। সেই মেডিকেল রিপোর্টের আরও লেখা হয়েছে, মৃত্যুর আগে মারাদোনার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল, এমনকি উপসর্গ দেখা দিলেও তা উপেক্ষাই করা হয়েছে।
মারাদোনার মৃত্যুর তদন্তের সঙ্গেই আরও একটি বিষয়ে আইনি জটিলতা চলছে। কিংবদন্তির মৃত্যুর পর সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে ইতিমধ্যেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাঁর পাঁচ সন্তান, আইনজীবী ম্যাটিয়াস মোরলা এমনকি মারাদোনার ভাইয়েরাও সম্পত্তির দাবি করছেন।
মারাদানোর মৃত্যুর পিছনের ঘটনা নিয়ে তদন্ত শেষে বুধবার রায় দেওয়া হয় আর্জেন্টিনার আদালতে। বিচারক রায়ে বলেছেন, অভিযুক্ত প্রত্যেকের আচরণ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং তাদের কার্যকলাপ ঘটনাকে ক্ষতিকারক পথে এগিয়ে নিয়েছে ও ভূমিকা রেখেছে। তাই চিকিৎসকদের প্রমাণ করতে হবে চিকিৎসায় তাঁরা কোনও খামতি রাখেননি
চিকিৎসক ও মারাদোনার সহকারীদের মধ্যে কথাবার্তার একটি অডিও গণমাধ্যমে ফাঁস হয়েছিল। তাতেও মৃত্যুর আগে মারাদোনার উপযুক্ত চিকিৎসা না হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছিল।